১৫ মিনিটে ১৫ টাকায় ক্যালশিয়াম নির্ণয় স্মার্ট ফোনে, উদ্ভাবনে খড়্গপুর আইআইটি
বর্তমান | ১৯ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রক্তে ক্যালশিয়ামের মাত্রা ঠিক আছে কি? কমে যায়নি তো? আবার বেড়ে যাওয়ারও যে ভয় আছে! চিকিৎসকরা বলে থাকেন, শুধু হাড় বা দাঁতের ক্ষয় রোধ করাই নয়, অপরিহার্য উপাদান ক্যালশিয়ামের মাত্রা অতিরিক্ত বাড়লে বা কমলে যে প্রাণসংশয় পর্যন্ত হতে পারে। কারণ, এই উপাদান কমলে হার্ট বন্ধ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আবার বেড়ে গেলে হতে পারে মারাত্মক খিঁচুনি।
শরীরের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি এই উপাদানের মাত্রা ঝটপট মাপার ব্যবস্থা করে তাক লাগিয়ে দিলেন খড়্গপুর আইআইটির বিজ্ঞানীরা। তাও আবার তা সম্ভব হবে স্মার্ট ফোনেই। উল্লেখযোগ্য এই উদ্ভাবনের নেপথ্যে আছেন আইআইটি খড়্গপুরের চারজন ও বিড়লা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এক বিজ্ঞানী। পাঁচজনের চারজনই বাঙালি। ডঃ সুমন চক্রবর্তী, ডঃ অনন্তকুমার ঘোষ, ডঃ পৌলোমী বিশ্বাস, ডাঃ প্রত্যক্ষ করণ ও ডঃ শ্রীজিতা পাল। আইইইই জার্নাল অব ফ্লেক্সিবল ইলেকট্রনিক্সে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাটি। ইতিমধ্যেই নয়া উদ্ভাবনটি পেটেন্ট পাওয়ার পথেও এগিয়েছে। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী সুমনবাবুর অধীনে গবেষণাটি হয়। ডঃ করণ ছবি বিশ্লেষণ করেন। ল্যাবরেটরি সহায়তা করেন ডঃ ঘোষ।
বাজারে যে ব্লাড ক্যালশিয়াম (সিএ) টেস্ট হয়, তা কীভাবে এই নয়া পদ্ধতিতে স্মার্ট ফোনেই করা সম্ভব? বিজ্ঞানীমহল সূত্রের খবর, সর্বসাকুল্যে খুব বেশি হলে ১৫ মিনিট সময় লাগবে কারও শরীরে ক্যালশিয়ামের মাত্রা জানতে। ভবিষ্যতে নয়া উদ্ভাবন বাজারজাত করা হলে একটি কিট ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তাতে থাকবে একটি ছোট্ট টিউব, সুগারের মেশিনের মতোই সামান্য রক্ত বের করার একটি সূচ এবং রিএজেন্ট দেওয়া একটি স্ট্রিপ। রক্ত নয়, এক্ষেত্রে পরিমাপ জানতে প্রয়োজন পড়বে মানব সিরামের। সেজন্য সূচ ফুটিয়ে দু’ফোঁটার মতো রক্ত টেস্টটিউবে দিয়ে ৫ মিনিট রাখলেই জমাট বেঁধে পড়ে থাকবে সিরাম। সেই সিরাম স্ট্রিপে দিয়ে ২ মিনিট ২২ সেকেন্ড মতো অপেক্ষা করতে হবে। স্ট্রিপের রং হালকা নীল থেকে গোলাপি হয়ে যাবে। তারপর তার ছবি তুলতে হবে। স্মার্ট ফোনে থাকা বিশেষ অ্যাপটিতে ছবি আপলোড করা হলে ১ মিনিটেই জানিয়ে দেবে ব্যবহারকারীর শরীরে ক্যালশিয়ামের পরিমাপ কত।
আদর্শ হিসেব অনুযায়ী, প্রতি ১ ডেসিলিটার রক্তে ক্যালশিয়ামের মাত্রা থাকা উচিত ৮.৬-১০.৩ মিগ্রা। ওই রিসার্চের মুখ্য গবেষক তথা আইআইটির তখনকার গবেষক এবং এখন আইআইসিবির বিজ্ঞানী ডঃ পৌলোমী বিশ্বাস বলেন, সাধারণ মানুষ খুব সহজে এই পরিমাপ জানতে পারবে। আবার সরকার বা বড় সংস্থাগুলির পক্ষেও জানা সহজ হবে। আমরা আশা করছি, এই আবিষ্কার জনস্বার্থে কাজে আসবে। বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জেন ডাঃ কিরণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ক্যালশিয়াম জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। তবে, এখন হাড়ের ক্ষয়রোগ অস্টিওপোরোসিসে এই রিপোর্ট কমই কাজে লাগে। কিন্তু বিভিন্ন হরমোনঘটিত অসুখে, টিউমারে এই টেস্ট করতেই হবে। নয়া প্রযুক্তির আবিষ্কর্তাদের সাধুবাদ জানাই।