এখনও অধরা সোনারপুরের জামাল সর্দার। বুধবার থেকেই জামালের প্রাসাদোপম বাড়ি খবরের চর্চায় এসেছে। এ দিন সংবাদমাধ্যমের নজরে আসে জামালের মায়ের বাড়ি। ছেলে অট্টালিকায় থাকলেও মায়ের দিন কাটে কুঁড়েঘরে। একই অবস্থা জামালের তিন ভাইয়েরও। তাঁদেরও ঠিকানা কুঁড়েঘরই।এ দিনই জানা গিয়েছে, ২০২১ সালের ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় একটি খুনের মামলাতেও নাকি নাম জড়িয়েছিল জামালের। তদন্তে সিবিআই যে ক’জনকে গ্রেপ্তার করেছিল, তাদের মধ্যে জামালও ছিল। কিন্তু প্রমাণের অভাবে দু’মাসের মাথায় সে জামিন পেয়ে যায়। তারপরেও থেমে যায়নি তার রমরমা। এ দিন পুলিশ জামালের প্রাসাদোপম বাড়িতে তল্লাশিতে গিয়েছিল। কিন্তু মূল ফটক বন্ধ থাকায় ভেতরে ঢুকতে পারেনি। তল্লাশিও হয়নি।
জানা গিয়েছে, পুলিশ কোর্টে গিয়ে সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে তবে জামালের বাড়িতে তল্লাশি করবে। তিন দিন হয়ে গেলেও পুলিশ জামালকে কেন ধরতে পারছে না, সে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়দের একাংশ। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘সম্ভাব্য যে সমস্ত জায়গায় জামাল থাকতে পারে, সেখানেই তল্লাশি চলছে। আশা করছি শিগগিরই ধরা পড়বে।’
মা-ভাইদের কুঁড়েঘরের পাশে জামাল সর্দারের অট্টালিকা বড়ই বেমানান। প্রাসাদের মতো বাড়িতে জামাল স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকে। আর রয়েছে প্রচুর কাজের লোক। তবুও সেখানে মায়ের ঠাঁই হয়নি। জামালের সঙ্গে তার মা বা বাকি তিন ভাইয়ের আর্থিক অবস্থার জমিন-আসমান ফারাক।
জামালের বাড়ি থেকে খানিক দূরেই বাঁশবাগানের মধ্যে জোড়াতাপ্পি দেওয়া কুঁড়েঘরে দিন কাটে মা শাহাজাদি সর্দারের। প্রতি মাসে বিধবা ভাতার হাজার টাকাতেই সংসার চলে তাঁর। মা শাহাজাদি অবশ্য ছেলে জামালের কোনও দোষ দেখতে রাজি নন। বললেন, ‘আমায় অনেকবার ওর বাড়িতে থাকার কথা বলেছিল। আমিই রাজি হইনি। যে দু’বেলা ভালো মতো খাওয়া-দাওয়া করে তার শত্রু অনেক। জামাল কোনও বেআইনি কাজ করেনি। ওর বাবার মৃত্যুর পর অনেক জমিজমা বিক্রি করে এখানে এই বাড়ি করেছে।’
জামালের মেজদা থাকেন ভাইয়ের বাড়ির উল্টো দিকে। তাঁরও সংসার ত্রিপল খাটানো ছাউনির নীচে। এক ছেলে জমি বেচে প্রাসাদ বানালো আর বাকিরা কেন ঝুপড়িতে তার উত্তর অবশ্য মেলেনি। শাহাজাদি পাল্টা দাবি করেন, ‘জামাল লোকের বিপদে-আপদে সবসময়ে ঝাঁপিয়ে পড়ত। ছেলে বিচারসভা বসাত। আসলে লোকে যেত ওর কাছে সমস্যা সমাধানের জন্য। কিন্তু কখনও মহিলাদের বেঁধে ও মারধর করেনি।’
কিন্তু সেই কথায় আমল দিতে রাজি নন গ্রামের মানুষজন। যাঁরা এতদিন এই জামালের ভয়েই মুখে কুলুপ দিয়েছিলেন। এ বার এক মহিলা বিচারের নামে তাঁকে বাড়িতে ডেকে শিকল বেঁধে মারধরের অভিযোগ এনেছেন জামালের বিরুদ্ধে। জামালের দুই শাগরেদকে বুধবারই গ্রেপ্তার করে সোনারপুর থানা। এ দিন প্রতাপনগর পঞ্চায়েতের উত্তর সাঙ্গুর গ্রামে জামালের বাড়িতে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু ১৬ তারিখ থেকে জামালের আর পাত্তা নেই। তারপর সেই যে গেটে তালা পড়েছে, আর খোলেনি।