ভারতের সংবিধানের ৩৬১ নম্বর অনুচ্ছেদে রাজ্যপালকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, সেই সুরক্ষা বর্মের পরিধি কতটা? বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে ‘শ্লীলতাহানি’র অভিযোগ আনা রাজভবনের অস্থায়ী মহিলাকর্মীর দায়ের করা মামলায় তার ব্যাখ্যা পেতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিস দিল সুপ্রিম কোর্ট।রাজ্যপাল পদে আসীন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি কোনও গুরুতর অভিযোগ ওঠে সেক্ষেত্রে দেশের সংবিধানের ৩৬১ ধারায় উল্লিখিত রক্ষাকবচ কীভাবে প্রযোজ্য হবে? এই প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টের দরজায় কড়া নেড়েছিলেন অভিযোগকারিণী। শুক্রবার সেই মামলা গ্রহণ করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এদিন মামলাটি ওঠে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে।
সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় কেন্দ্রকে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছে তাদের যুক্তি প্রাথমিক মান্যতা পেয়েছে। কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসাবে অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরামানিকে সাহায্য করতে হবে এই মামলায়, নির্দেশ সর্বোচ্চ আদালতের। এদিন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে স্ট্যান্ডিং কাউন্সেল আস্থা শর্মা নোটিস গ্রহণ করেছেন। এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, তিন সপ্তাহ পর মামলাটির পরবর্তী শুনানি হতে চলেছে।
এদিন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী সঞ্জয় বসু একটি বিবৃতি জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, 'এই গোটা ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা রাজ্যপালের মর্যাদাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা বলে বিবৃতি দেওয়া হচ্ছিল রাজভবনের তরফে। এদিন সর্বোচ্চ আদালত অভিযোগকারিণীর মামলার প্রেক্ষিতে সমস্ত পক্ষকে নোটিস দিয়েছে। ফলে সেই সমস্ত বিবৃতিতে দাঁড়ি পড়ল।' তিনি আরও বলেন, 'কোনও ব্যক্তি যত বড় পদেই থাকুন না কেন বা যত ক্ষমতার অধিকারী হোন না কেন, যৌন নিগ্রহের মতো ঘটনাকে কার্পেটের নীচে চাপা দেওয়া সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে দিক নির্দেশ করবে সুপ্রিম কোর্ট।'
অন্যদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজভবনের তরফে এক্স হ্যান্ডেল (আগে নাম ছিল টুইটার)-এ একটি দীর্ঘ পোস্ট করা হয়। সেখানে দাবি করা হয়, গত ২ মে এই অভিযোগ ওঠার পরেই এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে অভ্যন্তরীণ বিচারবিভাগীয় অনুসন্ধান চলে। রাজভবনের এই বিবৃতিতে গোটা ঘটনার নেপথ্যে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়। সেখানে আরও বলা হয়, রাজ্যপাল কোনও ভাবেই এই ‘নোংরা খেলা’র সামনে মাথা ঝোঁকাবেন না।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এদিন বলেন, 'সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ৩৬১ অনুচ্ছেদে রাজ্যপালের রক্ষাকবচের বিষয়টি বিচার্যের মধ্যে রেখেছে। নিগ্রহের শিকার ওই মহিলার বক্তব্যে প্রাথমিক মান্যতা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের দায়ের করা মানহানির মামলার প্রেক্ষিতে সিঙ্গল বেঞ্চের দেওয়া অন্তর্বর্তী নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চের তরফে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছিল, রাজ্যপালের সম্পর্কে ‘বেপরোয়া ভাবে’ কিছু মন্তব্য করা হয়েছে। আগামী ১৪ অগস্ট পর্যন্ত যাতে মুখ্যমন্ত্রী এবং আর যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাঁরা রাজ্যপাল সম্পর্কে ‘অসত্য’ বা ‘সম্মানহানিকর’ কোনও মন্তব্য যাতে না করেন সেই বিষয়ে অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের বেঞ্চ। এবার সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী সপ্তাহের শুরুতেই এই মামলাটির সম্ভাব্য শুনানি।