• পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিশ্বভারতীর বাংলাদেশি পড়ুয়াদের
    বর্তমান | ২০ জুলাই ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: কোটা বিরোধী আন্দোলনে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে অগ্নিগর্ভ অবস্থা। আন্দোলনে পুলিসের গুলিতে ইতিমধ্যেই নিহতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। জখম এক হাজারের বেশি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেদেশে মেট্রো ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে হাসিনা সরকার। গোটা দেশে এনিয়ে থমথমে অবস্থা। যার আঁচ এসে পৌঁছেছে শান্তিনিকেতনেও। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহ্যবাহী বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশি পড়ুয়ার সংখ্যা নেহাত কম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত ভবন, কলাভবন, ভাষাভবন, শিক্ষা ভবনে প্রায় ৪০জন বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করেন। দেশের এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা পরিবার ও পরিজনদের নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।‌‌ সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। কার্যত কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা তাঁদের। পরিবারের লোকের সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ করতে পারছেন না। বিশ্বভারতীতে পড়তে আসা বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের একটাই প্রার্থনা, বন্দুকের গুলিতে নয়, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হোক। 


    উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ রাখা যাবে না, এই দাবিতে শুরু হওয়া বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে প্রথমদিকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলিগ-যুবলিগের সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার রাতে সরকারের নির্দেশে নামানো হয় সেনাবাহিনী। তাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মৃত্যু মিছিলের কারণে দেশজুড়ে হরতাল ডেকেছিলেন বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু সেনাবাহিনী দমননীতিতে একের পর এক বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়। ফলে আন্দোলন বেড়েই চলেছে। ঢাকা থেকে ছাড়িয়ে বর্তমানে দেশের বড় বড় শহরগুলিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করা বাংলাদেশি পড়ুয়াদের কার্যত অসহায় অবস্থা। 


    বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনের হিন্দুস্তান ক্লাসিকাল মিউজিকের ছাত্রী দীপা সাহার বাড়ি বাংলাদেশের ময়মনসিংহে‌। এদিন তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অস্থিরতার কথা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা নেই। ফলে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে খুব অসহায় লাগছে। ঘন ঘন মৃত্যুর খবরে আতঙ্ক গ্রাস করছে।‌ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, বাংলাদেশে তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক হয়। 


    বিশ্বভারতীতে পাঠরতা আর এক ছাত্রী সঙ্গীতা সাহার বাড়ি বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে। দীপার মতো সঙ্গীত ভবনেরই ছাত্রী।‌ মাতৃভূমির বর্তমান অবস্থায় তিনিও পরিবারকে নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আন্দোলন নিয়ে তাঁর মত, যেভাবে মেধাকে ব্রাত্য রেখে সংরক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে সরকারি চাকরি দেওয়া হচ্ছে, তার ফলে দেশ কোনও এক জায়গায় পিছিয়ে পড়ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দেশে যেভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, তার সংস্কার করে মেধার মূল্যায়ন করা উচিত। এই দাবিতেই আন্দোলন শুরু হয়। আলোচনার মাধ্যমে এই আন্দোলনের সমাধান হওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে। সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই প্রতিমুহূর্তে পরিচিত মানুষের মৃত্যুর খবর কানে আসছে। শিক্ষার্থীরা কোনও অস্ত্র ছাড়া আন্দোলন শুরু করেছিল। তাদের অস্ত্র ছিল কলম। কিন্তু তাদের বন্দুকের নল দিয়ে দমন করা হচ্ছে। একদিক থেকে গুলি চললে কীভাবে এর সমাধান হবে? দেশের এই পরিস্থিতি চোখে দেখা যাচ্ছে না। পরিবারে মা-বাবা, ভাই বোনের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পেরে খুব অসহায় লাগছে। আমরা চাই রক্তারক্তি, খুনোখুনি বন্ধ হয়ে আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার নিষ্পত্তি হোক।  বাংলাদেশে বন্ধ ইন্টারনেট। উদ্বিগ্ন দুই পড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)