নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: জ্বরের বিন্দুমাত্র উপসর্গ নেই। ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এহেন রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতেই ধরা পড়ছে তিনি ডেঙ্গু। শুধু ডেঙ্গু নয়, এই ঘটনা ঘটছে ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেও। জ্বরের উপসর্গ না থাকায় রোগ বিস্তারলাভ পাচ্ছে নীরবে। দুই রোগের জীবাণুই নিজেদের চরিত্র বদল করে আরও বেশি ধাতক হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি লুকিয়ে রাখছে নিজেদের উপসর্গও। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর চলতি সপ্তাহেই গাইডলাইন দিয়ে সতর্ক করেছে প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে। ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগীরাও ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে পারেন, তা মাথায় রেখেই চিকিৎসা করতে হবে। পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে স্ক্র্যাপ টাইফাসও। খাতায় কলমে এই রোগে একজন আক্রান্ত হলেও স্বাস্থ্যদপ্তরের দাবি, বহু ক্ষেত্রেই বিষয়টি সামনে আসছে না। অন্যদিকে, শুক্রবারই ডেঙ্গু নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে আসানসোল পুরসভায়। সেখানে জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক সহ উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা মেয়র ও পুরসভার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন।
ডেপুটি সিএমওএইচ ২ অনুরাধা দেব বলেন, প্রাথমিক ভাবে জ্বর হলেও আমরা ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গু সন্দেহ করতাম। সাধারণ মানুষেরও সেই ধারনা রয়েছে। সম্প্রতি আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রথম দিকে রোগীর জ্বর আসছে না। তিনি শুধু ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত। স্বাস্থ্যদপ্তর চলতি সপ্তাহে গাইডলাইন দিয়ে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেছে।
চলতি বছরের ২৮ তম সপ্তাহ পর্যন্ত পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ জন। তারমধ্যে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। সেক্ষেত্রেও রহস্যজনক ঘটনা ঘটে। তিনি সুস্থভাবে সন্তান প্রসব করেন। প্রসবের দু’দিন পর ছুটি নিয়ে বাড়ি যাবেন। সেই সময়েই জ্বর আসে। চিকিৎসক অ্যালাইজা পরীক্ষা করে দেখেন ডেঙ্গু আক্রান্ত। তাঁকে দ্রুত আইসিইউতে দিয়েও কাজ হয়নি। তিনি মারা যান। স্বাস্থ্যদপ্তরের দাবি, গত মাসেই এই ঘটনার তদন্ত করে জানা গিয়েছে, প্রসবের সময়ে মায়েদের প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। খুব সম্ভবত সেই কারনেই তার জ্বরের উপসর্গ প্রকাশ পায়নি। সরকারি হাসপাতালগুলি সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু ডায়ারিয়া রোগীর দেহেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে। চিকিৎসক মহলের মতে, বেশ কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকায় কিছু নির্দিষ্ট স্টেইনের প্রতি মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গিয়েছে। ডেঙ্গু জীবাণুর অন্য স্টেইন যখন আক্রমণ করছে, তখন তা ভয়ঙ্কর জটিল আকার নিচ্ছে।
চরিত্র বদল করে ‘ঘাতক’ হচ্ছে ম্যালেরিয়াও। এখনও পর্যন্ত জেলায় চারজন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত। জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের দাবি, এতদিন প্লাসমোডিয়াম ফেলসিফেরাম জীবাণুর দ্বারা ম্যালিগ্যান্ট ম্যালেরিয়া সবচেয়ে ভয়ানক ছিল। এখন প্লাসমোডিয়াম ভাইভক্সও সমান ঘাতক হয়ে উঠছে। সেখানেও প্রথমে জ্বরে উপসর্গ প্রকাশ না পেয়ে ডাইরিয়ার উপসর্গ প্রথমে দেখা যাচ্ছে। এতে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, বর্ষা পড়তেই স্ক্র্যাপ টাইফাসের সংক্রমণ বাড়ার প্রমাণ মিলেছে।
অন্যদিকে, ডেঙ্গু সংক্রমণ ঠেকাতে জেলাশাসক পোন্নমবলম এস, স্বাস্থ্যদপ্তর ও প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে আসানসোল পুরসভায় যান। সেখানে পুরসভার মেয়র বিধান উপাধ্যায় সহ কর্মী আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। শহরজুড়ে থাকা খাটালগুলি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি যে সব জায়গায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ গত বছর বেশি ছিল, সেখানে নজর দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।