• আদালতে বন্ড সই করে প্রেমিকের সঙ্গে রেজিস্ট্রি বিয়ে সারল নাবালিকা
    বর্তমান | ২০ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: থানা থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য মেয়ের গলা জড়িয়ে অঝোরে কেঁদে চলেছেন মা। কিন্তু ১৮ বছর ৫ দিন বয়সের মেয়ের তাতে ভ্রূক্ষেপ নেই। মায়ের হাত ঠেলে প্রেমিকের হাতে হাত ধরে থানার জিপে চড়ে সোজা কাঁথি কোর্টে পৌঁছে যায় কিশোরী। শুক্রবার সকালে ভূপতিনগর থানায় ওই দৃশ্য দেখে পুলিস কর্মীরাও হতবাক। আদালতের এজলাসে বন্ডে সই করার পর বাড়ি ফিরে রেজিস্ট্রি বিয়ে সারল যুগল। থানা থেকে কোর্ট এবং বিয়ে পর্যন্ত গোটা পর্বে আগাগোড়া সঙ্গ দিলেন ভগবানপুর-২ ব্লকের গড়বাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রদীপকুমার মণ্ডল।


    গত ১০ জুলাই গড়বাড়ি-২গ্রাম পঞ্চায়েতের খিরিশবাড়ি গ্রামের এক যুবক এবং জুখিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তরচক গ্রামের কিশোরী বাড়ি ছেড়েছিল। গত ১০ তারিখ ওই কিশোরীর বয়স ১৮ পূর্ণ হতে চারদিন বাকি ছিল। এই অবস্থায় অপহরণের অভিযোগে থানার দ্বারস্থ হয় কিশোরীর পরিবার। ১৪ জুলাই ওই কিশোরীর বয়স ১৮ পূর্ণ হয়েছে। সেদিনই কিশোরী থানায় ফোন করে বিয়ের ব্যবস্থা করতে আর্জি জানায়। অপহরণের অভিযোগ দায়ের হওয়ায় পুলিস ওই যুগলের খোঁজ চালায়। শুক্রবার সকালে ওই যুগলকে ভূপতিনগর থানায় আনা হয়। খবর পেয়ে উত্তরচক গ্রাম থেকে ওই কিশোরীর মা থানায় যান। অপরদিকে, ছেলের পক্ষ নিয়ে থানায় হাজির হন গড়বাড়ি-২ পঞ্চায়েতে প্রধান সহ তাঁর ১০-১৫ জন সঙ্গীসাথী।


    থানার মধ্যে ওই কিশোরীর গলা জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন তাঁর মা। বারবার মেয়েকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু, মেয়ে কিছুতেই ওই কথায় রাজি নয়। বরং থানা থেকে মাকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ওই কিশোরী জানায়, তার ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এখন নিজেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। সুতরাং, ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্কের মাঝে পরিবার যেন দেওয়াল হয়ে না দাঁড়ায়।


    জানা গিয়েছে, খিরিশবাড়ি গ্রামের ওই যুবক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। পুনেতে কর্মরত। বাড়ির অবস্থাও বেশ ভালো। যদিও মেয়ের পরিবার ওই যুবকের সঙ্গে বিয়েতে রাজি ছিল না। কারণ, তারা অন্য এক যুবকের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা প্রায় সেরে রেখেছিল। কিন্তু পরিবারের ঠিক করা পাত্রকে পছন্দ নয় ওই যুবতীর। এনিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝামেলা হতো। এই অবস্থায় ১৮বছর পূর্ণ হওয়ার চারদিন আগে বাড়ি ছেড়েছিল। অপহরণের অভিযোগে পুলিসি হেনস্তা এড়াতে আগেভাগে ওই কিশোরী থানায় ফোন করে জানিয়ে দেয়, স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়েছে। পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও খিরিশবাড়ির ওই যুবককেই বিয়ে করতে চায়।এদিন সকালে থানা থেকে ওই যুগল কোর্টে রওনা দেওয়ার সময়ই ম্যারেজ রেজিস্ট্রার ঠিক করে রাখা হয়েছিল। আদালতে বন্ডে সই করে দু’জনে বাড়ি ফেরার পরই রেজিস্ট্রি বিয়ে সম্পন্ন হয়। পঞ্চায়েত প্রধান সামনে দাঁড়িয়ে থেকে যুগলকে আশীর্বাদ করেন। গড়বাড়ি-২গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রদীপকুমার মণ্ডল বলেন, ছেলে এবং মেয়ে পরস্পরকে বিয়ে করতে চায়। যুবকের বয়স ২১এর বেশি। মেয়েটির বয়স ১৮ পূর্ণ হয়েছে। এরপরও মেয়েটির পরিবার ওই সম্পর্ক মানতে রাজি ছিল না। ওই যুগল নিজেদের সম্পর্ক ভাঙতে চায়নি। শেষমেশ তারা পরস্পরের হাতে হাত রেখে নতুন জীবন শুরু শপথ নিয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)