• খড়ারে বিপজ্জনক সিনেমাহল ভাঙা শুরু হতেই শুরু স্মৃতিচারণ
    বর্তমান | ২০ জুলাই ২০২৪
  • সংবাদদাতা, ঘাটাল: রিয়ার স্টলের টিকিটের দাম ছিল ১৯ পয়সা। কাঠের বেঞ্চে, প্রথমতলায় হাতল দেওয়া চেয়ারের টিকিট ছিল ৫০ পয়সা। দোতলায় ব্যালকনিতে ৭৫ পয়সা, আর বিশেষ দু’টি বক্সের টিকিটমূল্য ছিল এক টাকা। খড়ার শহরের বহু পুরনো ‘আনন্দময়ী’ সিনেমা হল ভাঙা শুরু হতেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ছে প্রবীণদের। ‘বিপজ্জনক বাড়ি’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় হলটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। তাতে শহরের বহু মানুষ নস্টালজিয়ায় ভুগছেন। খড়ার পুরসভার চেয়ারম্যান সন্ন্যাসীচরণ দোলই বলেন, সিনেমা হলটি দীর্ঘদিন ধরে ভেঙে পড়ছিল। তাই বাড়ির মালিককে নোটিস দিয়ে পুরো ভবনটি ভেঙে দিতে বলা হয়েছে। সেই কাজই চলছে।


    গত শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ এই হলের পথ চলা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাতা  হরগোবিন্দ মুখোপাধ্যায় গ্রামীণ চিকিৎসক ছিলেন। তিনি হঠাৎই পেশা বদল করে সিনেমাহল চালু করেছিলেন। প্রায় ১০ কাঠা জমির উপর তৈরি সিনেমাহল শুরু থেকেই সাফল্য পায়। ওই পরিবারের সদস্য সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, সিনেমা হলটি প্রায় দু’দশক ধরে হলটি বন্ধ। হলটির জরাজীর্ণ অবস্থা। পুরসভার নির্দেশ মেনে আমরা হলটি ভাঙতে শুরু করেছি। কয়েকদিনের মধ্যে সেই কাজ শেষ হবে।


    শহরের প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান অরূপ রায় বলেন, ওই সিনেমা হলে শোয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। সেখানে দ্বিজেন চট্টোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, দেবশ্রী রায়ের মতো শিল্পীরা অনুষ্ঠান করে গিয়েছেন। হ্যারিকেনের আলোর যুগে জেনারেটরের আলোয় ঝলমল করত খড়ারের সিনেমাতলা। সিনেমা দেখা, রেস্তোরাঁয় জমিয়ে খাওয়া আর আড্ডা চলত। ধীরে ধীরে সবই হারিয়ে যায়।


    হলটির পাশেই বাপের বাড়ি ঘাটাল শহরের বাসিন্দা কেয়া মণ্ডল চৌধুরীর। তিনি বলেন, তখন আমি স্কুলে পড়ি। প্রতিটা শো শুরুর আগে পুরনো বাংলা গান বাজত। সেই গান শোনার জন্য বাড়ির জানালার ধারে বসে থাকতাম। কত লোক আসত। প্রত্যেক শোয়ের আগেই ভিড় জমে থাকত।


    ১৯৭১ সালে ১ এপ্রিল নাইট শো চলাকালীন ওই সিনেমাহলেই নকশালদের হাতে খুন হয়েছিলেন হরগোবিন্দবাবু। 


    ফলে কিছুদিন হলটি বন্ধ থাকে। তার কিছুদিন পর বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রযোজক তথা খড়ার শহরের পাশের গ্রামের বাসিন্দা প্রদ্যোৎ পাঁজা হলটি লিজে নেন। এই হলেই সন্ধ্যা রায় অভিনীত ‘টগরী’ ছায়াছবিটি প্রথম মুক্তি পায়। যার প্রযোজক ছিলেন প্রদ্যোৎবাবু। ২০০২ সালের পর ওই হল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। আস্তে আস্তে ফিকে হতে থাকে হলের চেহারা। চুন-সুরকির দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়তে থাকে। ভবনটি বিপজ্জনক হয়ে পড়ায় পুরসভার নোটিসে সেটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)