প্রথম দফায় ছ’টি, ৫০ বাসরুট বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে রাজ্য
বর্তমান | ২০ জুলাই ২০২৪
রাজু চক্রবর্তী, কলকাতা: লোকসানের বহর কমাতে সরকারি বাস পরিচালনার দায়িত্ব এবার বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে রাজ্য। পরিবহণ দপ্তর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে জনপ্রিয় ছ’টি সরকারি রুটের ৮৫টি বাস প্রাইভেট মালিকদের হস্তান্তর সম্পন্ন হয়েছে। ওই রুটগুলিতে বাস চালানোয় সরকারের আর কোনও ভূমিকা থাকবে না। তবে বেসরকারি এজেন্সিগুলি সরকারের শর্ত মেনে পরিষেবা দিচ্ছে কি না, তার উপর কড়া নজরদারি থাকবে রাজ্যের। সেই মতো যাত্রীস্বার্থ সুনিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে বেসরকারি মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করেছে রাজ্য। এই প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেল সফল হলে আগামী দিনে প্রায় ৫০টি সরকারি বাস রুট একইভাবে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
সরকারি বাস চালাতে ইচ্ছুক ব্যক্তি বা সংস্থা বাছাই করতে টেন্ডার ডেকেছিল পরিবহণ দপ্তর। সেখানে সর্বোচ্চ দর হাঁকা ব্যক্তি বা বেসরকারি পরিবহণ সংস্থাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক পরিভাষায় তাঁদের বলা হচ্ছে ‘বাস ফ্র্যাঞ্চাইজি অপারেটর’ (বিএফও)। সংশ্লিষ্ট রুটগুলিতে সরকারি বাসের ভাড়া অপরিবর্তিত রেখেই পরিষেবা দেবেন বিএফওরা। গাড়ির তেল, ড্রাইভার, কন্ডাকটর, রক্ষণাবেক্ষণ— সব দায়িত্বই তাঁদের। উল্টে বাস পিছু ৫০ হাজার টাকা করে ‘সিকিউরিটি ডিপোজিট’ জমা করতে হবে সংশ্লষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থাকে। সেই সঙ্গে প্রত্যেক বাসের জন্য রুট ভেদে প্রতি মাসে অগ্রিম ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ‘লাইসেন্স ফি’ গুনতে হবে বিএফওদের।
পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী শুক্রবার বলেন, ‘বাম আমল থেকে বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন ধারাবাহিক লোকসান করে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্পোরেশনগুলির ঘুঘুর বাসা ভাঙতে নির্দেশ দিয়েছেন। রাজ্যবাসীর করের টাকায় কর্পোরেশনগুলির কর্মীদের বেতন-পেনশন দিতেই প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি গলে যায়। কিন্তু পেশাদারিত্বের অভাবে এখনও সংস্থাগুলি আর্থিকভাবে সাবলম্বী হতে পারেনি। কর্মীদের একাংশের দায়বদ্ধতার অভাবে বহু সরকারি বাস ডিপোতে পড়ে থাকছে। সরকারের টাকাও যাচ্ছে, অথচ আম জনতা পরিষেবা পাচ্ছে না— এমনটা দিনের পর দিন চলতে দেওয়া যায় না। তাই আমরা পিপিপি মডেলে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী দিনে আরও সরকারি রুট বিওপিদের হস্তান্তর করা হবে।’ বাস চালানোর সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মীদের দপ্তরের অন্যান্য কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। সূত্রের দাবি, মাত্র ছ’টি রুট বেচেই ইতিমধ্যে ৩০ লক্ষ টাকা ঢুকেছে পরিবহণ দপ্তরের অ্যাকাউন্টে। সেই সঙ্গে লাইসেন্স ফি বাবদ মাসে মাসে আয়ও নিশ্চিত। মন্ত্রী আরও জানান, বেসরকারি সংস্থাকে বাস চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হলেও সরকার নির্ধারিত ভাড়াই রাখতে হবে। দিনের শেষে সরকারি ডিপোতেই গ্যারাজ করতে হবে বাস। অনিয়মের অভিযোগ এলে চুক্তি বাতিলের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন স্নেহাশিসবাবু।
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সিটি সুবারবান বাস সার্ভিসেসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা। তাঁর কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রী ও পরিবহণমন্ত্রীকে বেসরকারি বাস মালিকদের তরফে ধন্যবাদ জানাই। তাঁরা আমাদের উপর ভরসা রেখেছেন। এই আস্থা অটুট রাখতে যাত্রী পরিষেবার মান আরও উন্নত করতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনার সময় টানা দু’বছর গাড়ি বসেছিল। ব্যাঙ্ক ঋণের কিস্তি টাকা না মেটানোয় বহু বাস উঠে যায়। পিপিপি মডেলে সরকারি বাসগুলি পেয়ে আমরা অত্যন্ত খুশি। বেসরকারি পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লক্ষ লক্ষ কর্মী এর ফলে উপকৃত হবেন।’