বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: মাস্টার অব হসপিটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের জাল ডিগ্রি দাখিল করে সরকারি চাকরিতে ঢুকে রীতিমতো গ্রুপ এ পদযমর্যাদার সহকারী সুপারের কাজ করছিলেন এক যুবক। পুলিস ভেরিফেকেশনেই ধরা পড়ল তাঁর জারিজুরি। চাকরি গেল ডাঃ কল্যাণ মাইতি নামে ওই যুবকের। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা কল্যাণ মাইতি তমলুক মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত ছিলেন। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর ১৬ জুলাই রীতিমতো ‘অর্ডার’ জারি করে গোটা বিষয়টি স্বাস্থ্যদপ্তরের ওয়েবসাইটে তুলে ধরেছে। তাতে তোলপাড় স্বাস্থ্যভবনের অন্দরে। কারণ, ওয়েস্ট বেঙ্গল জেনারেল সার্ভিসের ক্যাডারের প্রায় ৪০০ আধিকারিক এখন সহকারী থেকে ডেপুটি সুপার (নন মেডিক্যাল) পদে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনের অন্যতম স্তম্ভ। তাঁদেরই একজনের বিরুদ্ধে জাল সার্টিফিকেট দাখিল করে চাকরির অভিযোগ ওঠায় বহু প্রশ্ন উঠেছে।
প্রথমত, চাকরি চলে যাওয়া যুবক ৩১ মার্চ ২০২৩ সালে স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্মী নিয়োগ সংস্থা ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের (ডব্লুউবিএইচআরবি) মাধ্যমে সহকারী সুপারের চাকরি পান। তখন কি তাঁর কাগজপত্রের বিন্দুমাত্র তথ্য যাচাই হয়নি? দ্বিতীয়ত, ইদানীং বহু ক্ষেত্রেই জনস্বার্থকে ঢাল করে চাকরি পাওয়ার দীর্ঘদিন বাদে পুলিসি নথি যাচাই হচ্ছে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে যা হওয়া উচিত কাজে যোগদানের আগেই। তৃতীয়ত, যে প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি নিয়ে বিতর্ক, সেই মানবভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বহু প্রতিষ্ঠানের বাংলায় অস্তিত্বই নেই। নাম কা ওয়াস্তে একটি বা দুটি স্টাডি সেন্টার চালু করে রমরম করে ডিগ্রি দেওয়া চলছে। সহকারী সুপার মহলেরই একটি অংশের আশঙ্কা, যদি কর্মরতদের ফের নথি যাচাই হয়, অসংখ্য ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের জাল ডিগ্রি ধরা পড়বে।
এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডাঃ মাইতি বলেন, ‘বিষয়টি আসলে এরকম নয়।’ এর বেশি বলতে চাননি তিনি। তমলুক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ শর্মিলা মালিক বলেন, ‘ওই যুবক বলেছেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে উনি প্রতারিত হয়েছেন। পুলিস বিশ্ববিদ্যালয়টি নিয়ে তদন্ত করেছে। হিমাচলপ্রদেশে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডকোয়ার্টার্সে নথিপত্রও পাঠিয়েছিল। তারা জানিয়েছে, ওঁর ডিগ্রিটি জাল। এখন সেটা সত্যিও হতে পারে। আবার পুলিসের নজরে চলে আসায় মিথ্যাও বলতে পারে। যাই হোক, ডিগ্রিটি জাল বলে জানানো হয়েছে, এটাই বাস্তব।’ ডব্লুবিএইচআরবি’র চেয়ারম্যান ডাঃ সুদীপ্ত রায় বলেন, ‘নথি যাচাইয়ের কাজ পুলিসের। আমাদের নয়।’ স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘পুলিস তদন্ত করে অনিয়ম ধরেছে। আমরা সজাগ আছি, এটা তারই প্রমাণ।’
স্বাস্থ্যদপ্তর ও তমলুক মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রামে ওই বিতর্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি সেন্টার ছিল। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, সেখানে যত আসন থাকার কথা, তার থেকে অনেক বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়েছিল। তারপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম পুলিসের স্ক্যানারে আসে। যদিও ওই সহকারী সুপার তমলুক মেডিক্যাল কলেজের পদাধিকারীদের কাছে দাবি করেছেন, তিনি ২০১২ সালে যখন পড়াশোনা করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ইউজিসি অনুমোদনসহ সবই ছিল। পরে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি লিখিতভাবে স্বাস্থ্যভবনেও জানান।
প্রশ্ন সেখানেও। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্মই পুলিসি নজরদারিতে রয়েছে, সেখানকার শংসাপত্র নিয়ে তিনি সরকারি চাকরির দাবিই বা করলেন কেন? সহকারী সুপারদের রাজ্যব্যাপী সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স-এর কর্মসমিতি কর্তারা বলেন, তাঁরা সরকারি চাকুরে। সরকারি সিদ্ধান্তের সঙ্গেই রয়েছেন।