অর্ক দে, কলকাতা: একই ব্যক্তি। কাজ করছেন দু’জায়গায়। দুই জায়গা থেকেই প্রতিমাসে তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকছে বেতন! এমন ঘটনা ঘটেছে কলকাতা পুরসভার অন্দরমহলে। সন্দেহের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে আপাতত তেমনই ৬০ জন অস্থায়ী কর্মীকে চিহ্নিত করা গিয়েছে।
অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নাম রয়েছে পুরসভার জঞ্জাল সাফাই ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের খাতায়। আবার তিনিই জ্বলজ্বল করছেন অন্য বিভাগের কর্মী-তালিকাতেও। এক নাম, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্যও এক। তারপরও মিলছে দু’জায়গার বেতন। আর সেই তথ্য হাতড়েই সামনে এসেছে এই গরমিলের ছবি। এই তথ্য পেয়ে চক্ষু চড়ক গাছ পুরসভার অর্থ বিভাগের কর্তাদের। গরমিলের তল খুঁজতে তদন্ত জারি রয়েছে। কিন্তু কীভাবে ধরা পড়ল এই বেনিয়ম? কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, বছর দেড়েক হল পুরসভার স্থায়ী কর্মীদের পাশাপাশি অস্থায়ী কর্মীদেরও আইকার্ড চালু করা হয়েছে। স্থায়ী কর্মীদের যেমন ‘এমপ্লয়িজ আইডি’ থাকে, তেমন প্রত্যেক অস্থায়ী কর্মীর জন্য ‘কনট্রাকচুয়াল আইডি’ চালু করা হয়। এক শীর্ষ পুরকর্তা বলেন, ‘পুরসভার অধীনে বিভিন্ন ধরনের অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। কেউ পুরসভার সরাসরি নিযুক্ত, কাউকে আবার এজেন্সি মারফত কাজে নেওয়া হয়েছে। আগে বিভিন্ন বিভাগ নিজেদের ইচ্ছামতো অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করত। তাঁদের এক একজনের কাজের মেয়াদ পুনর্নবীকরণের দিনক্ষণও ছিল আলাদা। মেয়র ফিরহাদ হাকিম এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সমস্ত অস্থায়ী কর্মীর কাজের মেয়াদ পুনর্নবীকরণের দিনক্ষণও একইসঙ্গে ধার্য করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তাঁদের এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে পুরসভার কর্মিবর্গ বিভাগকে পদক্ষেপ নিতে বলেন। লক্ষ্য একটাই, যাতে স্থায়ী কর্মীদের মতো কোন বিভাগে কত অস্থায়ী কর্মী আছেন, তার সঠিক তথ্য পুরসভার ডেটাবেসে থাকে।’
কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, মেয়রের নির্দেশের পরই ৩৪টি কলামের চার্ট তৈরি হয়। তাতে অস্থায়ী কর্মীর নাম, ঠিকানা, আধার নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সহ নানা তথ্য নেওয়া হয়। তাঁদের আইডি নম্বর দেওয়া শুরু হয়। প্রায় বছর খানেক পর দেখা যায়, প্রায় ২৫ শতাংশ কর্মী সব তথ্য দিতে গড়িমসি করছে। তখন শুরু হয় বেতন আটকানো। এক অফিসারের কথায়, আমাদের সন্দেহ আগেই ছিল। বেতন আটকানো শুরু হতেই সকলে নথি জমা দেওয়া শুরু করে। যেহেতু আধার বাধ্যতামূলক নয়, তাই আমরা চাপ দিতে পারিনি। কিন্তু আমাদের কেন্দ্রীয় সার্ভারে তোলা হয়েছে প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। আর সেই অ্যাকাউন্ট ধরে খতিয়ে দেখতে গিয়েই ধরা পড়েছে গরমিল। এখন সকলের প্যান নম্বরও চাওয়া হচ্ছে। আগামী দিনে আরও এমন ‘ডাবল’ বেতন পাওয়া কর্মীর হদিশ মিলতে পারে।