আরও বিপাকে কালনার পুরপ্রধান, নিরাপত্তারক্ষীকে মারধরে দায়ের FIR, শোকজ করল দল
প্রতিদিন | ২০ জুলাই ২০২৪
অভিষেক চৌধুরি, কালনা: কালনা রাজবাড়ি চত্বরে নিরাপত্তারক্ষীকে চরম হেনস্থা-সহ আধিকারিক ও কর্মীদের গালিগালাজ ও হুমকির ঘটনায় কালনা পুরসভার পুরপ্রধান আনন্দ দত্তর বিরুদ্ধে কালনা থানায় অভিযোগ দায়ের করল পুরাতত্ত্ব বিভাগ। শুক্রবার কালনা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের কালনা সাব সার্কেলের সিনিয়র কনসারভেশন অ্যাসিন্ট্যান্ট অমিত মালো। অমিতবাবু জানান, “উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান আনন্দ-সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কালনা থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পুলিশকে পুরো ঘটনার কথা লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।” কালনা এসডিপিও রাকেশ কুমার চৌধুরি বলেন, “একটি অভিযোগ এসেছে। প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
অন্যদিকে, ঘটনায় চেয়ারম্যনের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে তাঁর দল তৃণমূল (TMC)। পুরপ্রধানকে জবাবদিহি চিঠি পাঠানো হয়েছে। ফলে ‘উভয় সংকটে’ পড়া পুরপ্রধানের ভবিষ্যত কি হয় এখন সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে রাজনৈতিকমহল। পুরসভা-সহ দলীয় কর্মসূচিতে তিনি উপস্থিত থাকলেও এই বিষয়ে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন তিনি।
১৬ জুলাই রথযাত্রা কমিটির পক্ষ থেকে কালনা রাজবাড়ির ভিতরের লালজি মন্দিরে হাজারেরও বেশি মানুষজনের জন্য ভোগ বিতরণের আয়োজন করা হয়। সেই জন্য জলের জার নিয়ে ভিতরে ঢুকছিল একটি টোটো। কিন্তু সংরক্ষিত এলাকায় ঢোকার অনুমতি না থাকায় টোটোটিতে আটকায় পুরাতত্ত্ব বিভাগের এক নিরাপত্তারক্ষী। তারপরই পুরপ্রধান ছুটে এসে এক নিরাপত্তারক্ষীকে ধাক্কাধাক্ক মেরে ফেলে দেন বলে অভিযোগ। এখানেই শেষ নয় আরও এক নিরাপত্তা রক্ষীকে মারতে যাওয়া, আধিকারিক,কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার একাধিক অভিযোগ উঠেছে কালনার পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে। সেই সংক্রান্ত একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিও ভাইরাল হতেই নিন্দার ঝড়ও সর্বস্তরে বয়ে যায় (ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল)। এমন ঘটনা তৃণমূল নেতৃত্ব ভালো চোখে দেখছে না তা দলের কথায় স্পষ্ট হয়ে যায়। এই ঘটনার পর স্বাভাবিক কারণেই দলে আরও ‘কোণঠাসা’ হয়ে পড়েন ওই তৃণমূল নেতা।
ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সূত্রে জানা গিয়েছে, ওইদিন ঘটনা চলাকালীন মুহূর্তগুলি ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছিল। কিন্তু পুরপ্রধান ও তাঁর লোকজন অফিসে ঢুকে অধিকাংশ ভিডিও হুমকি দিয়ে মুছে দেন বলে অভিযোগ। যদিও অন্য দুটি মোবাইলের ভিডিও ফুটেজগুলি তাঁরা কিছু করতে না পারায় সেগুলি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেন তাঁরা। এখন সেই ভিডিও তাঁদের কাছে মূল ‘হাতিয়ার’ হয়ে ওঠেছে। অন্যদিকে এই ঘটনা কেন ঘটলো তার কারণ জানতে চেয়ে পুরপ্রধানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান পূর্ব বর্ধমান তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।
একদিকে থানায় এফআইআর, অন্যদিকে দলের পক্ষ থেকে জবাবদিহি চিঠি এলেও পুরপ্রধান আনন্দের যেন কোনও হেলদোল নেই এমনই দাবি স্থানীয়দের। আর এখানেই তৈরি হয়েছে সংশয়। অনেকের দাবি, এই ঘটনা কোনও সাধারণ মানুষ করলে সঙ্গেসঙ্গেই তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হত। তাই তাঁদের প্রশ্ন পুরপ্রধানের ক্ষেত্রেও কি তাই হবে? এদিনও পুরপ্রধান আনন্দ দত্তকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।