পাহাড়ে ধসের আগাম সতর্কবার্তায় জিএসআই-এর ‘ভূসঙ্কেত’ ও ‘ভূস্খলন’
এই সময় | ২০ জুলাই ২০২৪
কুবলয় বন্দ্যোপাধ্যায়
পাহাড়ি এলাকায় ধস নামার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কি না, এতদিন সেই বিষয়ে আগাম কোনও তথ্যই পাওয়া যেত না। কিন্তু জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (জিএসআই) উদ্যোগে তৈরি পোর্টাল ‘ভূসঙ্কেত’ এবং মোবাইল অ্যাপ ‘ভূস্খলন’ এবার ওই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগাম সঙ্কেত দেবে বলে দাবি করছে ন্যাশনাল ল্যান্ডস্লাইড ফোরকাস্টিং সেন্টার (এনএলএফসি)। শুক্রবার কলকাতায় এসে ওই পোর্টাল এবং অ্যাপের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় কয়লা ও খনিমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি।গত কয়েক দশকে বিশ্বে আবহাওয়া বিজ্ঞান অসামান্য উন্নতি করার পরেও এখনও পর্যন্ত ভূমিকম্প এবং ভূমিধসের মতো বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কোনও আগাম সতর্কতা জারি করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তবে একটা বিষয়ে বিজ্ঞানীরা নিঃসন্দেহ — বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ধসের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। প্রতি বছর বিশ্বের যে দেশগুলোয় পাহাড়ি অঞ্চলে ধস নেমে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, সেই তালিকায় রয়েছে ভারতও।
ধসের আগাম সতর্কতা জারি করতেই জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জিএসআই) এবং সহযোগী আরও কয়েকটি দেশি-বিদেশি সংস্থার মিলিত উদ্যোগে যে পোর্টাল ও অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, তার নেপথ্যে রয়েছে ৮ বছরের দীর্ঘ সমীক্ষা ও গবেষণা। মন্ত্রক জানাচ্ছে, ২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন ধসপ্রবণ এলাকায় গবেষণা চালিয়েছেন ভূ-বিজ্ঞানীরা। এর জন্য তাঁদের প্রায় ৪.৩০ বর্গ লক্ষ কিলোমিটার এলাকায় ফিল্ড স্টাডি করতে হয়েছে।
জিএসআই-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, ধসের আগাম সতর্কবার্তা নিয়ে দেশের যে রাজ্যগুলোর ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে বাংলা, তামিলনাডু, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, সিকিম এবং কেরালার অন্তত ১৬টি জেলা। এর মধ্যে বাংলার দার্জিলিং ছাড়াও পূর্ব সিকিম এবং তামিলনাডুর নীলগিরি এলাকাকে ‘পাইলট প্রজেক্ট’-এর জায়গা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল।
ভূবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় হিল স্টেশনের মধ্যে অন্যতম দার্জিলিং জেলার আয়তন ৩২৩২ বর্গ কিলোমিটার। এই জেলার ৭৫% এলাকাকেই ‘ধসপ্রবণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের বসবাস হওয়ায় দার্জিলিংয়ের নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্র বেশিমাত্রায় সচেতন। আপাতত জিএসআই-এর গবেষণা যে পর্যায়ে রয়েছে, তাতে ১৫০ বর্গ কিমির কাছাকাছি জায়গার পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। চেষ্টা চলছে আরও ছোট কোনও এলাকার পূর্বাভাস দেওয়ার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘এই পোর্টাল ও অ্যাপে এবার সাধারণ মানুষও সহজে ধসের সতর্কবার্তা পাবেন। এটা কম কথা নয়।’