নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে গভীর রাতে ব্রাহ্মণী নদী থেকে দেদার চলছে বালি পাচার
বর্তমান | ২১ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: রাতের অন্ধকারে ব্রাহ্মণী নদী থেকে অবৈধভাবে বালি তুলে চলছিল পাচার। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শুক্রবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে ৯টি বালিবোঝাই ট্রাক্টর আটক করল নলহাটি থানার পুলিস। যদিও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিস।
বর্ষার মরশুমে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নদনদী থেকে বালি তোলা অব্যাহত রয়েছে। নলহাটির ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া জয়পুর, শালবন, বৈধরা সহ একাধিক ঘাটে রাতের অন্ধকারে বালি তুলে ট্রাক্টরে পাচার চলছে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী এই পাচারে যুক্ত বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অভিযানে নামে নলহাটি থানার পুলিস। তাঁরা লক্ষ্য করেন, রাস্তা দিয়ে একের পর এক বালিবোঝাই ট্রাক্টর চলে আসছে। কোনও ট্রাক্টরের নম্বরপ্লেট নেই। যদিও পুলিসের গাড়ি দেখে মাঝরাস্তায় ট্রাক্টর দাঁড় করিয়ে চম্পট দেয় চালকরা। পুলিস ওভারলোডেড বালিবোঝাই ট্রাক্টরগুলি আটক করে। পুলিস তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া নলহাটির জয়পুর গ্রামের কাছে অবৈধভাবে নদী থেকে বালি তুলে পাচার করা হচ্ছিল। ঘটনায় নির্দিষ্ট ধারায় মামলা শুরু হয়েছে। সেইসঙ্গে বাজেয়াপ্ত হওয়া ট্রাক্টরগুলির ইঞ্জিন নম্বর দেখে মালিকের খোঁজ শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, জয়পুর থেকে বৈধরা ব্যারেজ খুব কাছেই। ১৯৫৬সালে ব্যারেজের উদ্বোধন হয়। সিদ্ধান্ত হয়, বর্ষার সময় ঝাড়খণ্ড থেকে আসা জল এই ব্যারেজের একাধিক লকগেটের মাধ্যমে ধরে রাখা হবে। খরার সময় চাহিদামতো লকগেট খুলে সেই জল মেন ক্যানেলের মাধ্যমে ছাড়া হবে। তারপর থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যারেজে বড়মাপের কোনও সংস্কার হয়নি। ব্যারেজ লাগোয়া এলাকায় বালি মাফিয়াদের রমরমার কারণে আশঙ্কার মেঘ দেখছেন এলাকার বাসিন্দারা। কারণ, প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী ব্যারেজের আপ এবং ডাউনে তিন কিলোমিটারের মধ্যে বালি তোলা যায় না। কিন্তু তারপরও অবৈধ বালি উত্তোলন চলে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁরা বলেন, কয়েক বছর ধরে নৌকার উপর পাম্প মেশিন বসিয়ে যথেচ্ছভাবে বালি তোলা হচ্ছে। ফলে ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে বৈধরা ব্রিজ ও ব্যারেজ। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তেমনই নদীগর্ভে তৈরি হচ্ছে গর্ত। ফিবছর নদীতে স্নান করতে নেমে সেইসব গর্তে তলিয়ে মৃত্যু হচ্ছে। আবার ভাঙছে পাড়ও।
জানা গিয়েছে, জয়পুর ঘাটের ধারে উঁচু পাহাড়ের মতো বালি স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে ট্রাক্টরে বালি লোড করে দেওয়া হচ্ছে। বর্ষার আগে এলাকার বালি মাফিয়ারা মেশিনের সাহায্যে নদী থেকে বালি তুলে মজুত করে রেখেছে। এখন সেই বালি চড়া দামে পাচার চলছে। তার জন্য পাড় কেটে যানবাহন যাওয়া আসার রাস্তা করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অবৈধভাবে বালি তুলে নদীবাঁধের উপর দিয়ে রাস্তা বানিয়ে পাচার চলছে। প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত শয়ে শয়ে ট্রাক্টর ভর্তি বালি পাচার হয়ে আসছে। এর ফলে যেমন নদী বাঁধ দূর্বল হচ্ছে, তেমনি ক্ষতি হচ্ছে রাজস্বের। পুলিসের একাংশের মদতেই চলছে এই পাচার। যদিও পুলিস সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।