রামচন্দ্র মণ্ডল: ১১ জুলাই বাংলাদেশ গিয়েছিলাম এক আত্মীয়ের বিয়েতে যোগ দিতে। একইসঙ্গে রংপুরে পুরনো পরিচিতদের সঙ্গে দেখা করে আসার ভাবনাও ছিল। হঠাৎ সব পরিকল্পনা গেল ওলটপালট হয়ে। ছাত্র আন্দোলনের কারণে এখন উত্তাল বাংলাদেশ। প্রথমে ভেবেছিলাম অল্পতেই সব মিটে যাবে। কিন্তু দেখলাম, অশান্তি ক্রমে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ল। দিকে দিকে আগুন জ্বলে উঠল। ভয়ে কেউ রাস্তায় বের হতে পারছে না। মানুষ মারা যাচ্ছে। ভয়ে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না। চারদিকে এক আতঙ্কের পরিবেশ। কীভাবে বাড়ি ফিরব? চিন্তায় পড়ে যাই। কিন্তু এভাবে বেশিদিন ওদেশে থাকাটা নিরাপদ নয়। দেশে ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। তবে রেল বন্ধ। সড়ক পরিবহণও বন্ধ। ফোনে যোগাযোগ করব তারও কোনও সুযোগ নেই, ইন্টারনেট পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চারদিকে সংঘর্ষ চলছে। জাতীয় সড়ক দিয়ে রিজার্ভ করা গাড়িও আসতে চাইছে না। এক সময় দেশে ফেরার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তারপর অনেক কষ্টে পরিচিত একজনের বাইকে করে সীমান্তের কাছে পৌঁছই। বাইকে এসেছি গ্রামের ঘুরপথ দিয়ে। চারদিকে আতঙ্কের পরিবেশ। বাড়ির বাইরে কেউ নেই। ফাঁকা রাস্তাঘাট। সারাক্ষণ মনে হয়েছে, পথ আটকে দেবে না তো? এই বুঝি খুন হয়ে গেলাম। সারাক্ষণ চোখ বুজে ইস্টদেবতার নাম জপ করতে করতে কোনওরকমে বাংলাবান্ধায় এসে পৌঁছই। সেখানে আশার আলো দেখতে পাই। অবশেষে নিজের দেশে ফিরতে পেরেছি। কিন্তু তবুও আতঙ্ক কাটছে না। যে দৃশ্য দেখে এসেছি তা জীবনে ভোলার নয়। (লেখক হাতিয়াডাঙা, ডাবগ্রাম-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা)