ঘনঘন জায়গা বদল করে আত্মগোপনের চেষ্টায় ছিল ‘সোনারপুরের জেসিবি’
বর্তমান | ২১ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও সংবাদদাতা, বারুইপুর: বাড়ি থেকে পালানোর পর উত্তর থেকে দক্ষিণে কার্যত চরকিপাক খেয়েছে ‘সোনারপুরের জেসিবি’ জামালউদ্দিন সর্দার। কেউ তাকে যাতে চিনে না ফেলতে পারে, তার জন্য মাস্ক পরছিল সে। সেই সাবধানতাই তার কাল হল! মাস্ক পরা এক ব্যক্তিকে দেখে সন্দেহ হয় পুলিসের। মাস্ক নামাতেই বোঝা যায়, এই সেই জামাল। তখনই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। শনিবার সোনারপুরের এই জমি হাঙরকে বারুইপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ১০ দিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে জামাল প্রথমে ঘুটিয়ারি শরিফ এলাকার নারায়ণপুরে তার শ্বশুরবাড়ির পাড়ায় যায়। পুলিস হানা দিতে পারে আন্দাজ করে সে শ্বশুরবাড়িতে না থেকে রাত কাটায় একটি বাঁশবনে। এদিকে সংবাদমাধ্যমে তার খবর লাগাতার সম্প্রচার হচ্ছে জানতে পেরে নিজের চেহারা লুকনোর সিদ্ধান্ত নেয় সে। পরদিন অর্থাৎ বুধবার মাস্ক পরে সে ঘুটিয়ারি শরিফ থেকে ট্রেন ধরে বিধাননগর ষ্টেশনে নামে। সেখান থেকে বাগুইআটিতে এক আত্মীয়ের বাড়ি যায়। রাতে সেখানেই ছিল। বৃহস্পতিবার সোনারপুরের মিলনপল্লিতে আসে। সেখানে এসে এক আত্মীয়কে ফোন করে। তারপর সে চলে যায় ডানকুনিতে এক পরিচিতের বাড়ি। রাতে সেখান থেকে আবার বাগুইআটি আসে জামাল। শুক্রবার ভাঙড়ে কেএলসি থানার বৈরামপুরে নিজের তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যায় সে। সন্ধ্যায় তাঁকে বাসে তুলে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শামুখপোতার দিকে যাচ্ছিল কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক জামাল। তখনই পুলিসের জালে ধরা পড়ে যায় সে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিস জানতে পেরেছে, আগামী ছ’মাস আত্মগোপন করার লক্ষ্য ছিল জামালের।
আরও জানা গিয়েছে, পালানোর পর সে নিজের ফোন বন্ধ করে দেয়। পুলিসকে বিভ্রান্ত করতে যেখানে যে আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিল, সেখানকার কোনও মোবাইল থেকে ফোন করছিল। কিন্তু সোনারপুরে এসে যখন সে ওইভাবে এক আত্মীয়কে ফোন করে, তখন থেকেই তার গতিবিধির উপর নজর রাখা শুরু করে পুলিস। জামালের সঙ্গে কখনও কাজ করেছে, এমন লোকজনের সাহায্যও নেওয়া হয়। ভাঙড়ের কাছে আসতেই সূত্র মারফত তারা জামালের লোকেশন জেনে যায়।
এদিন দুপুরে বারুইপুর আদালতে তোলার সময় তাকে একপ্রকার নির্লিপ্তই দেখিয়েছে। গ্রেপ্তারির পরও সে দাবি করে, তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে। সে যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল, তারাই তার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করছে। সম্পূর্ণভাবে ফাঁসানো হয়েছে তাকে। আদালতে জামালের পক্ষে ছ’জন উকিল সওয়াল করেন। তার বিরুদ্ধে যে সব ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে, তার বেশিরভাগই জামিনযোগ্য। দু’টি মামলায় জামিন অযোগ্য ধারা রয়েছে। তদন্তকারী অফিসার জেল ও পুলিস হেফাজতের আবেদন নিয়ে ভুল করায়, বিচারকের কাছে ভর্ৎসিত হতে হয়। দীর্ঘ সওয়াল-জবাবের পর তিনি রায় স্থগিত রাখেন। বিকেলে তিনি জামালকে ১০ দিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন।