• অভিযুক্তদের ‘বন্দি’ করতে পুলিসের হাতে ফিরছে হাতকড়া
    বর্তমান | ২১ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: হাতকড়া ফিরে আসছে পুলিসের হাতে! খুন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির মতো অপরাধের অভিযুক্তদের পুলিস এখন হাতকড়া পরাতে পারবে। সৌজন্যে দেশের নয়া আইন ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ (বিএনএসএস)। পুলিস ধরলে হাতকড়া পড়বে— সাধারণভাবে এমনটা বলা হলেও সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের কারণে তা করতে পারত না পুলিস। নয়া আইনে সেই বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা আছে, একজন তদন্তকারী অফিসার খুন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির মতো অপরাধে অভিযুক্তকে হাতকড়া পরাতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। 


    ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ৪৩(৩) ধারায় বলা হয়েছে, অপরাধের গুরুত্ব বুঝে হাতকড়া ব্যবহার করতে পারবে পুলিস। কোন কোন অপরাধের ক্ষেত্রে তা করা যাবে, ঠিক করে দেওয়া হয়েছে আইনে। বিএনএসএস অনুযায়ী, দাগী আসামীদের গ্রেপ্তার করে কিংবা তাদের আদালতে পেশ করার সময় হাতকড়া পরানো যাবে। খুন, খুনের চেষ্টা, ধর্ষণ, মহিলা কিংবা শিশুদের শ্লীলতাহানি, অ্যাসিড অ্যাটাক, মানবপাচারের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর করতে পারবেন তদন্তকারীরা। শুধু তাই নয়, জঙ্গি কিংবা মাদক সংক্রান্ত মামলাতেও অভিযুক্তদের হাতকড়ায় ‘বন্দি’ করতে পারবেন উর্দিধারীরা। 


    প্রসঙ্গত, স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে অভিযুক্তদের হাতকড়া পরানোয় কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। ১৯৮০ সালে সুপ্রিম কোর্ট অভিযুক্তকে হাতকড়া পরানোর ক্ষেত্রে কার্যত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ধীরে ধীরে গোটা দেশে হাতকড়ার ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। গত ১ জুলাই থেকে নয়া আইন লাগু হওয়ায় সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়েছে। কলকাতা পুলিস সূত্রে খবর, হ্যান্ডকাফ দীর্ঘদিন না ব্যবহার করায় অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই নতুন হাতকড়া বা হ্যান্ডকাফ কেনার পরিকল্পনা করছে লালবাজার। কলকাতা পুলিস জানিয়েছে, প্রতিটি থানাকেই পর্যাপ্ত সংখ্যক হাতকড়া দেওয়া হবে। গোয়েন্দা বিভাগের জন্যও হ্যান্ডকাফের বরাত দেওয়া হবে বলে সূত্রের দাবি। তবে নির্দিষ্টভাবে কতগুলি হাতকড়া কেনা হবে, তা এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গিয়েছে।


    এদিকে, যে কোনও মামলার স্বার্থে তদন্তকারী অফিসারকে তথ্য ও প্রমাণ বাজেয়াপ্ত করতে হয়। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতায় বলা হয়েছে, লঘু কিংবা গুরু ধারা নির্বিশেষে তথ্য-প্রমাণ, ঘটনাস্থলের নমুনা বাজেয়াপ্ত করার গোটা প্রক্রিয়া অডিও-ভিডিও ফরম্যাটে রেকর্ড করে রাখতে হবে। যতক্ষণ বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া চলবে, ততক্ষণ ক্যামেরা বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু, প্রশ্ন হল, বিপুল পরিমাণ এই ডেটা সংরক্ষিত হবে কোথায়? সাধারণত থানাগুলির নিজস্ব মালখানায় বাজেয়াপ্ত মালপত্র রাখে পুলিস। লালবাজারে সেন্ট্রাল মালখানাতেও সেই ব্যবস্থা রয়েছে। এবার ওই মালপত্রের সঙ্গে ডিজিটাল রেকর্ডিংও সংরক্ষণ করে রাখতে হবে পুলিসকে। তা আদালতে পেশও করতে হবে। স্বভাবতই বিপুল পরিমাণ ডেটা সংরক্ষণের চিন্তায় ঘুম উড়েছে লালবাজারের। 
  • Link to this news (বর্তমান)