রিকশতে ২ কিমি যেতে ১৭০০ টাকা, সংঘর্ষ এড়াতে হেঁটে বিমানবন্দরে, ফিরতে পারব ভাবিনি, বলছেন বনগাঁর ব্যবসায়ী
বর্তমান | ২১ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, বনগাঁ: ‘মহাখালি ফ্লাইওভারে এসে রিকশ থেমে গেল। সেখানে আন্দোলনকারী ও পুলিসের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। রিকশ চালক বললেন, যেতে পারব না। নেমে যান। ভয়ে সিঁটিয়ে গেলাম। তারপর এদিকওদিক ঘুরে, জিজ্ঞেস করে করে হাঁটলাম প্রায় চার কিলোমিটার। পথের বহু জায়গায় গোলমালের আওয়াজ। কোথাও শ্মশানের মতো থমথমে। চার কিলোমিটারের উপর হেঁটে অবশেষে পৌঁছলাম বিমানবন্দর। ততক্ষণে ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা।’
ব্যবসার কাজে আগেও প্রতিবেশী দেশে গিয়েছিলেন বাপন দাস। এবারের অভিজ্ঞতা রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে তাঁর। শনিবার দেশে ফিরে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে গিয়েও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছিলেন। তবে ফিরে অবশেষে স্বস্তির শ্বাস নিচ্ছেন। এখনও আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি। জানালেন, বাংলাদেশকে এত অগ্নিগর্ভ কখনও দেখিনি। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলার পথে ঘাটে শুধুই বারুদের গন্ধ। দেশে ফেরা একপ্রকার চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছিল। অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েও মেলেনি। ভারতে যাব শুনে অনেকেই পিছিয়ে গিয়েছেন। ভয়ে কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেননি। যে রিকশচালক বিমানবন্দর পৌঁছে দিতে রাজি হলেন। তিনি মাঝপথে নামিয়ে দু’কিমির জন্য ১৭০০ ( বাংলাদেশের মুদ্রা) টাকা নিয়ে চলে গেলেন। বিমানবন্দরের ৫০০ মিটার দূরে সংঘর্ষ চলছিল। প্রায় চার কিলোমিটার ঘুরপথে পৌঁছতে পারি শেষপর্যন্ত।
১৬ জুলাই বাংলাদেশ সরকারের আয়োজনে এক সেমিনারে যোগ দিতে ঢাকায় গিয়েছিলেন বনগাঁর ব্যবসায়ী বাপন দাস। শনিবার দেশে ফেরার কথা। ঢাকা থেকে যশোর আসতে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছতে প্রবল বেগ পেতে হয়। বাপনবাবু বলেন, রাস্তায়, রাস্তায় পুলিস দাঁড়িয়ে। কোনও যানবাহন চলাচল করেনি। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় হাতে লিখে পাস দেওয়া হয় বিমানবন্দরে। এরপর বিমানে যশোর। সেখানেও রাস্তায় কোনও যানবাহন নেই। সেনা টহল দিচ্ছে। ব্যবসায়িক সূত্রে পরিচিত একজন একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে দেন। গাড়ির সামনে বিদেশি লিখে বেনাপোল পৌঁছনো যায় কোনওরকমে। সেনা রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পাসপোর্ট দেখে। তারপর ছাড়ে। জানা গিয়েছে, সেদেশে বসবাসকারী অনেকেই ভয়ে ফিরে আসতে চাইছেন দেশে।