চুপিতে ডাইভার্সিফিকেশন, পাখির সঙ্গে বাড়ছে বন্যপ্রাণ
এই সময় | ২১ জুলাই ২০২৪
সূর্যকান্ত কুমার, কালনা
বাঘের বাচ্চা নাকি? নৌকা থেকে চরের মধ্যে ঝোঁপের সামনে গায়ে ডোরাকাটা প্রাণীটিকে দেখে তেমনই ভেবে চমকে উঠেছিলেন কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা মনোজিৎ অধিকারী। একটু কাছে আসতে বুঝতে পারেন ওটা ফিসিং ক্যাট, রাজ্যপ্রাণী। বাঘরোল বা মেছোবিড়াল বলেও ডাকা হয় তাদের। তবে শুধু তারাই নয়, গোসাপ, শেয়াল, ভোঁদড়েরও দেখা মিলছে পূর্বস্থলীর চুপির পাখিরালয়ে।পরিযায়ী পাখির বিচরণস্থলে এমন প্রাণীর দেখা পাওয়া উপরিপাওনা হিসেবেই দেখছেন পাখিরালয়ের মাঝি, গাইডরা। তাঁরা মনে করছেন, পরিযায়ী পাখির পাশাপাশি এমন প্রাণীর সংখ্যা বাড়লে পর্যটকরা আরও আকৃষ্ট হবেন। সেক্ষেত্রে শুধু শীতের সময়েই নয়, পর্যটকদের আনাগোনা থাকবে বছরের অন্যান্য সময়েও। বাঘরোল, ভোঁদড়, গোসাপ বা স্বর্ণ শেয়ালের মতো প্রাণীর সংখ্যা যে চুপির পাখিরালয়ে বাড়ছে সে সম্পর্কে অবহিত বন দপ্তরও।
জেলার সহকারী বনাধিকারিক সোমনাথ চৌধুরী বলেন, ‘এই সমস্ত প্রাণীর সংখ্যা চুপির পাখিরালয়ে বেড়েছে এটা ঠিক। পাখিরালয়ের ডাইভার্সিফিকেশন বাড়ছে। ওই এলাকায় গঙ্গার জল এখন সেভাবে ফ্লো করে না। বদলে ওই সমস্ত প্রাণীদের আস্তানার মতো স্থলভূমি ও জঙ্গল বাড়ছে।’
পূর্বস্থলীর চুপি ও কাষ্ঠশালীর ছাড়িগঙ্গায় শীতে আশ্রয় নেয় দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার পরিযায়ী পাখি। পাখি দেখতে ভিড় করেন প্রচুর পর্যটক। স্থানীয় মাঝিরা নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে নদীতে ঘুরিয়ে পাখি দেখান পর্যটকদের। গত কয়েক বছরে পক্ষীপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চুপি। বড়দিন, বর্ষশেষ ও নববর্ষের দিনে বহু মানুষ আসেন এখানে। পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় গত তিন বছরে পাখিরালয়ের পরিকাঠামোরও বেশ কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
এখন দেখা যাচ্ছে, পাখির সঙ্গে এলাকায় উঁকি দিচ্ছে কিছু বিরল প্রাণীও। তাদের দেখা পাচ্ছেন পর্যটকরাও। যেমন পর্যটক মনোজিৎ অধিকারী। তিনি বলেন, ‘নদীতে নৌকায় ঘোরার সময়ে এক জায়গায় দেখি, জলের মধ্যে কালো রঙের কোনও প্রাণী সাঁতার কাটছে। একটু কাছাকাছি গিয়ে বুঝতে পারি ওরা ভোঁদড় দম্পতি। নদিয়ার দিকে খানিক এগোতেই নজরে পড়ল চরের মধ্যে গায়ে ডোরাকাটা দাগের প্রাণী। একঝলকে মনে হয়েছিল ব্যাঘ্রশাবক নয়তো!
কাছাকাছি যেতে বুঝলাম, ওটা বাঘরোল। সাধারণত অন্ধকার নামলে ওদের দেখা মেলে। ভরদুপুরে এমন প্রাণীর দেখা পাব সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি।’ নৌকায় ঘুরতে ঘুরতে সোনালি শেয়াল দেখতে পান পর্যটক রিয়া দত্ত। বলেন, ‘নৌকা থেকে দেখতে পাই চরের মধ্যে শিকার খাচ্ছে সোনালি শেয়াল। এই ধরনের শেয়াল খুবই বিরল।’
স্থানীয় মাঝি বাবু শেখ বলেন, ‘আমরা রাতে শেয়ালের ডাক শুনতে পাই। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে দিনেও এই প্রাণীগুলোর দেখা পাচ্ছেন পর্যটকরা।’ গাইড সঞ্জয় সিং বলছেন, ‘মনিটর লিজার্ড বা গোসাপ এবং শেয়ালের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। পাখি দেখার সঙ্গে সঙ্গে এদের দেখতে পেলে খুশি হবেন পর্যটকরা। শীতের সময় ছাড়াও কিছু পর্যটক আসেন এখানকার নির্জন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে।’
কিন্তু, এ সব অতি বিরল বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষা নিয়ে কতটা ভাবছে বন দপ্তর? এই প্রশ্নের জবাবে জেলার এডিএফও বলেন, ‘বন দপ্তরের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। তাছাড়া মানুষের সচেতনতা অনেকটাই বেড়েছে। বন্যপ্রাণ বাঁচাতে এখন বহু মানুষ বা সংগঠন আন্তরিক ভাবে কাজ করছেন। তাই তো এসব প্রাণীর সংখ্যা বাড়ছে।’
—নদীতে নৌকায় ঘোরার সময়ে এক জায়গায় দেখি, জলের মধ্যে কালো রঙের কোনও প্রাণী সাঁতার কাটছে। একটু কাছাকাছি গিয়ে বুঝতে পারি ওরা ভোঁদড় দম্পতি। নদিয়ার দিকে খানিক এগোতেই নজরে পড়ল চরের মধ্যে গায়ে ডোরাকাটা দাগের প্রাণী— মনোজিৎ অধিকারী, পর্যটক