২১শের সেই অশান্তির সর্তকতা পাত্তা দেয়নি রাজ্য আইবি
এই সময় | ২১ জুলাই ২০২৪
যুব কংগ্রেসের কর্মসূচি ঘিরে যে প্রবল অশান্তি হতে পারে, ৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের সাতদিন আগে তিনি সেই সম্ভবনার কথা জানিয়েছিলেন নিজের দপ্তরের কর্তাদের। কিন্তু একজন ডিএসপির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্টকে পাত্তাই দেয়নি রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ(আইবি)!১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই সচিত্র ভোটার কার্ডের দাবিতে যুব কংগ্রেসের মহাকরণ অভিযান ঘিরে পুলিশের গুলি চালনায় ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। প্রাক্তন পুলিশ কর্তা পঙ্কজ দত্তের আফশোস, ‘পুরো ঘটনা অনায়াসে এড়ানো যেত, আমার ওই রিপোর্টকে উপেক্ষা করা না হলে।’
আজ থেকে তিন দশক আগে কলকাতার বুকে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সামনে এসেছে তৎকালীন সিপিএম সরকার এবং পুলিশ আধিকারিকদের ব্যর্থতার ছবি-ই।
কী বলা হয়েছিল ডিএসপির রিপোর্টে?
সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের আইবিতে জমা পড়া সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, কলকাতায় আন্দোলনের ডাক দেওয়া হলেও সেদিন শহরের থেকেও বেশি লোক আসবেন নদিয়া, হাওড়া, হুগলি এবং দুই চব্বিশ পরগনা থেকে। ফলে বাইরের জেলা থেকে কারা সেই মিছিল বা আন্দোলন কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন তাঁদের সম্পর্কে আগাম খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন জেলার গোয়েন্দা বিভাগকেও (ডিআইবি) কাজে লাগানো যেতে পারে।
কারণ, যুব কংগ্রেসের ওই আন্দোলনে বাইরের অনেক দুষ্কৃতী মিশে গিয়ে হিংসার পরিবেশ তৈরি করতে পারে। ফলে, পুরো বিষয়টি হালকা ভাবে নেওয়াটা ভুল হবে। বহু আগে জানানো হলেও একজন জুনিয়র অফিসারের এই রিপোর্টকে তেমন গুরুত্ব দেননি সে সময়ে আইবির দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরা। অনেক পরে গন্ডগোলের আশঙ্কার কথা জানানো হয় কলকাতা পুলিশকে। কিন্তু আশেপাশের জেলাগুলি থেকে কারা ওই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন, তা কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের গোয়েন্দাদের পক্ষে অত অল্প সময়ের মধ্যে জানা সম্ভব ছিল না।
ফলে সেদিন টি-বোর্ড এবং এসপ্ল্যানেড ট্রাম ডিপোর সামনে পুলিশের সঙ্গে যুব তৃণমূল কর্মীদের প্রবল অশান্তি শুরু হয়। পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালালে মারা যান ১৩ জন। ওই ঘটনায় আক্রান্ত হন তৎকালীন কংগ্রেস নেত্রী বর্তমানে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ঘটনার সময়ে ধর্মতলাতে নিজের দায়িত্ব পালন করতে হাজির ছিলেন বছর পাঁচেক আগে আইজি(আইবি) হিসেবে অবসর নেওয়া পঙ্কজ নিজেও।
২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ২১ জুলাইয়ের ঘটনা নিয়ে বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়। তৎকালীন রাজ্য প্রশাসনের বেশ কয়েকজন আধিকারিককে সেখানে বয়ান দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছিল। কমিশনের তদন্তের ফলাফল খামবন্দি হয়ে জমা পড়লেও তা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
ফলে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত মুখ খুলতে রাজি নন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তাও। তাঁর বক্তব্য, ‘পুলিশ বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নিয়ে আগাম ব্যবস্থা নিলে, সেদিনের ঘটনা হয়ত এড়ানো যেত। এতগুলো মানুষের মৃত্যু হতো না।’