এই সময়, ব্যারাকপুর: আদালত তো নয়, যেন দুর্গ! শনিবার সকাল থেকেই ব্যারাকপুর মহাকুমা আদালত চত্বরে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী দেখে চমকে গিয়েছিলেন বিচার প্রার্থী থেকে আইনজীবীরা। পুলিশের ঘেরাটোপে কালো প্রিজন ভ্যান থেকে বিহারের কুখ্যাত গ্যাংস্টার সুবোধ সিং নামতেই সাংবাদিকরা ছেঁকে ধরেন তাকে। কিন্তু প্রশ্নের স্রোতে নিরুত্তর সুবোধ হাসতে হাসতেই ঢুকে পড়ে কোর্ট লকআপে।সওয়াল জবাব শেষে দেড় ঘণ্টা পর হেলমেটে মাথা ও মুখ ঢেকে বেরিয়ে ওই প্রিজন ভ্যানে চেপেই বেরিয়ে যায় সুবোধ। দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর বিচারক সুবোধকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) অনুপম সিং-সহ পদস্থ পুলিশকর্তারা এ দিনই বেলঘরিয়া থানায় সুবোধকে জেরা করেন।
২০২০ সালের ৪ অক্টোবর টিটাগড় থানার কাছে বিটি রোডের ধারে দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান ব্যারাকপুরের রাজনীতির তৎকালীন স্ট্রংম্যান মণীশ শুক্লা। সেই ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছিল সে সময় বিহারের বেউর জেলে বন্দি সুবোধের। তখন তদন্তভার নিয়ে সিআইডি কয়েকবার তাকে এ রাজ্যে আনার চেষ্টা করলেও পারেনি।
শেষমেশ গাড়ির ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনায় শনিবার ব্যারাকপুর পুলিশ তাকে হেফাজতে নিতে পারল। অতীতে টিটাগড়, ব্যারাকপুর জুড়ে মণীশের সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। সূত্রের খবর, মণীশের সেই ডেরায় সুবোধকে যাতে হামলার মুখে না পড়তে হয় তার জন্যই এ দিন ছিল বেনজির পুলিশি ঘেরাটোপ ও হেলমেটের প্রতিরক্ষা।
এ দিন সকাল থেকেই ব্যারাকপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (উত্তর ও গোয়েন্দা প্রধান) গণেশ বিশ্বাসের নেতৃত্বে হাজির র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স। ততক্ষণে খবর হয়ে গিয়েছে বেলঘরিয়ায় ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় আদালতে হাজির করানো হচ্ছে বিহারের গ্যাংস্টার সুবোধকে। নীল জিন্স ও সাদা চেক শার্টের সুবোধ প্রিজন ভ্যান থেকে নামতেই কার্যত তাকে ব্যারিকেড করে নেয় পুলিশ।
কোমরে দড়ি পরিয়ে তাকে কিছুটা হাঁটিয়ে কোর্ট লকআপে ঢুকিয়ে দিয়ে স্বস্তি ফেরে পুলিশের। ঢোকার সময় না থাকলেও বেরনোর সময় তার মাথায় হেলমেট দেখে চমকে গিয়েছিলেন অনেকেই। এক পুলিশকর্তা বলেই দিলেন, ‘সুরক্ষা তো দিতেই হবে।’ এ দিন কোর্ট লকআপে সুবোধকে ঢোকানোর পর তার আইনজীবী কমলজিৎ সিং সেখানে হাজির হন।
তাঁর কথায়, বেলঘরিয়া থানা তাকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে চেয়েছে জানার পর সুবোধ জানায় ১৪ দিন সিআইডি হেফাজতে থাকার পর তার শরীর খুব ক্লান্ত। জরুরি ভিত্তিতে এসিজেএম আদালতে চলে ব্যবসায়ীর গাড়িতে গুলি চালানোর মামলার শুনানি। সুবোধের আইনজীবী আদালতে বলেন, তাঁর মক্কেল সাত বছর ধরে জেলবন্দি। সে ওই ঘটনায় যুক্ত নয়।
পাল্টা সরকারি আইনজীবী লোপামুদ্রা দাস বলেন, যারা ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের জেরা করেই সুবোধের নাম উঠে এসেছে। এর পরই বিচারক তন্ময় রায় মামলার তদন্তকারী অফিসারের কাছে কেস ডায়েরি চেয়ে নেন। অজয় মণ্ডল বলেন, গত ১৫ জুন যখন তাঁর গাড়িতে গুলি চালানোর পর তিনি থানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন সুবোধই তাঁকে ফোন করে হুমকি দিয়ে বলেছিল ‘বচ গ্যয়া সালা’।
দিন তিনেক আগেও ব্যারাকপুরে তাঁর বাড়ির সামনে অপরিচিত কয়েকজনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী।