কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা গাছেরা কেমন আছে, তা জানতে এ বার হেলথ অডিট করতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে তো বটেই, হাল্কা ঝড়েও উত্তর থেকে দক্ষিণের নানা প্রান্তে উপড়ে পড়েছে গাছ। তা ছাড়া, নতুন করে যে চারাগুলি পোঁতা হচ্ছে, তার যত্নেও খামতি থাকছে বলে অভিযোগ।যে কারণে সেগুলি বৃক্ষে পরিণত হতে পারছে না। এমন নানা কারণেই হেলথ অডিটের সিদ্ধান্ত। সবুজরক্ষায় এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে দাবি পুরকর্তাদের। পুরসভার উদ্যান বিভাগ সূত্রে খবর, গত ২৮ জুন গল্ফগ্রিনে কৃষ্ণচূড়া গাছ ভেঙে মারা যান এক রিকশাচালক। এর রেশ না কাটতেই ক্যামাক স্ট্রিট, হরিশ মুখার্জি রোড, শরৎ বোস রোডে গাছ পড়ার ঘটনা সামনে আসে।
যার প্রেক্ষিতে ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডে গাছেদের হেলথ অডিটের কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে। ওয়ার্ডের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা গাছ খতিয়ে দেখছে উদ্ভিদবিদদের একটি দল। দলে আছেন শুভপ্রসাদ ভট্টাচার্য, অভীক মুখোপাধ্যায় এবং সর্বাণী রায়। তাঁদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই ওয়ার্ডে থাকা গাছেদের ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।
পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘৯৫ নম্বর ওয়ার্ডে গাছেদের হেলথ অডিট হয়েছে। বাকি ওয়ার্ডেও ধাপে ধাপে এই অডিট হবে।’ উদ্যান বিভাগের কর্তাদের বক্তব্য, হেলথ অডিট শেষ হওয়ার পর যে গাছগুলি আর বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা জানাবেন, সেগুলি কাটতে বন দপ্তরের অনুমতি চাওয়া হবে। অনুমতি মিললে ওই জায়গায় বিজ্ঞানীদের পরামর্শ মেনেই নতুন গাছ লাগানো হবে।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানী আক্রামুল হকের কথায়, ‘কলকাতায় এখন ৬ ফুট উচ্চতার যে গাছগুলি আছে, তার বেশিরভাগই কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া। এর মূল মাটির বেশি গভীরে পৌঁছতে পারেনা। যে কারণে সামান্য ঝড়েই আলগা হয়ে যায়। হেলথ অডিট হলে বর্তমান পরিস্থিতি কেমন তা জানা যাবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা যাবে। পাশাপাশি গাছ পড়ে দুর্ঘটনাতেও রাশ টানা যাবে।’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরী অবশ্য মনে করেন, ‘গরমের সময়ে শহরের গাছগুলি পর্যাপ্ত জল পায় না। তাই অনেক চারা পোঁতা হলেও তা পূর্ণ গাছ হতে পারে না। ফলে শুধু হেলথ অডিট করলেই হবে না। গাছেদের যাতে যথাযথ যত্ন হয়, সে দিকেও নজর রাখতে হবে।’