• ভোট দেননি যাঁরা, তাঁদের কথাও শোনার বার্তা মমতা-অভিষেকের
    এই সময় | ২২ জুলাই ২০২৪
  • মণিপুস্পক সেনগুপ্ত

    লোকসভা নির্বাচন হোক বা একের পর এক বিধানসভা উপনির্বাচন—সাম্প্রতিক অতীতে সবক’টি ভোটেই দারুণ ফল করেছে তৃণমূল। কিন্তু এই বিপুল জয়ের পরেও যাঁরা তৃণমূলকে ভোট দেননি, তাঁদের কাছেও দলের নেতা-কর্মীদের যাওয়ার নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’জনেই বোঝালেন, যাঁরা জোড়াফুলকে এবার ভোট দেননি, তাঁরাও দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।ক’দিন আগে বিজেপির বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী স্লোগান তুলেছিলেন, ‘জো হমারা সাথ, হম উনকে সাথ।’ অর্থাৎ, যাঁরা বিজেপিকে ভোট দেননি, সেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কার্যত বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। তাঁর এই ‘লাইন’ বিজেপিতেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

    এই প্রেক্ষাপটে মমতা-অভিষেক এদিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা সে পথে হাঁটবেন না। বরং যাঁরা তৃণমূল বিরোধী, তাঁদের কথাও শুনতে হবে জোড়াফুলের নেতা-কর্মীদের। রবিবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যেখানে আমরা জিতেছি, সেখানে মানুষকে গিয়ে ধন্যবাদ জানাবেন। যেখানে জিতিনি, সেখানে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে বলবেন, আমাদের ক্ষমা করবেন। হয়তো আপনাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে আমাদের কোনও খামতি ছিল। আগামী দিনে যাতে না হয়, সেটা দেখব।’

    শুভেন্দুর প্রসঙ্গ উল্লেখ না-করে অভিষেকও সভায় বলেন, ‘যাঁরা আমাদের ভোট দিয়েছেন এবং যাঁরা ভোট দেননি, তাঁদের সবার জন্য কাজ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এটাই পার্থক্য। আমরা মানব সেবায় বিশ্বাস করি। ধর্ম বাড়িতে করি।’ বিজেপি যেমন এই লোকসভা ভোটে সংখ্যালঘুদের সমর্থন আদায় করতে পারেনি, তেমনই লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে এ বারও দাঁত ফোটাতে পারেনি তৃণমূল।

    তবে সেই ফলাফলের পরেও মমতা-অভিষেকরা উত্তরবঙ্গ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেননি। বরং উত্তরবঙ্গের দলীয় কর্মীদের আরও বেশি করে মানুষের কাছে যাওয়ার নির্দেশই দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ২১-এর সভা থেকে মমতার প্রত্যয়, উত্তরবঙ্গের মানুষের আস্থা তৃণমূল অর্জন করবেই।

    তিনি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে আমাদের রেজ়াল্ট খারাপ হয়েছে। আগামী দিনে উত্তরবঙ্গের মানুষের সমর্থন পাব, এই আশা আমাদের আছে।’ এরপরই তিনি মালদার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘লোকসভা ভোটে মালদায় আমরা জিততে পারিনি। জানি না, আপনারা কেন আমাদের ভুল বুঝলেন? কংগ্রেস, বিজেপিকে একটা করে সিট দিয়েছেন। ওরা কিছু করবে আপনাদের জন্য? কোনওদিন করবে না।’

    আক্ষেপ ভুলে দলীয় কর্মীদের আশার কথাও শোনান মমতা। বলেন, ‘আমি মালদার মানুষকে ভুল বুঝিনি। মালদার আম, আমসত্ত্ব ২০২৬-এ আমরা পাবই, এ বিশ্বাস আমার আছে।’ যা শুনে এক বিজেপি নেতার আক্ষেপ, ‘আমরা সংখ্যালঘু ভোটারদের অলবিদা জানানোর আয়োজন করছি। আর তৃণমূল হেরে যাওয়া এলাকাগুলি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক বিচক্ষণতার ধারেকাছেও যে আমরা এখনও পৌঁছতে পারিনি, তা এর থেকেই স্পষ্ট।’

    যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের খোঁচা, ‘এ তো ভূতের মুখে রাম নাম! হেরে যাওয়া এলাকার সাধারণ ভোটারদের কথা শোনা তো দূরের কথা, ওইসব এলাকার প্রশাসনিক বৈঠকে বিজেপির বিধায়ক, সাংসদদের পর্যন্ত ডাকেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’
  • Link to this news (এই সময়)