টিকবে না মোদী সরকার! হাত ধরে নমোকে বার্তা মমতা-অখিলেশের
এই সময় | ২২ জুলাই ২০২৪
এই সময়: এবার লোকসভায় বিজেপি’র একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-থাকায় নরেন্দ্র মোদী সরকার বেশি দিন টিকবে না বলে আগেই ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লির মোদী সরকারের আয়ু খুব বেশি দিন নয় বলে অখিলেশ যাদবও সংসদে দাঁড়িয়েই মন্তব্য করেছিলেন কিছু দিন আগে। এবার কলকাতায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে অখিলেশ যাদবকে পাশে নিয়ে দিল্লির মসনদ থেকে বিজেপিকে হটানোর ডাক দিলেন তৃণমূলনেত্রী।অখিলেশও বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি থেকে দেশকে বাঁচাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একজোট হয়ে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী নির্বাচন ছাড়াই মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের পতন সম্ভব বলে মনে করছেন ‘ইন্ডিয়া’ শিবিরের এই দুই শীর্ষ নেতা।
সার্বিক ভাবে বিরোধী শিবিরে কংগ্রেসের পরে সমাজবাদী পার্টি ও তৃণমূল কংগ্রেস দুই প্রধান শক্তি। এ দিন ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা-অখিলেশের একযোগে বিজেপি’কে উৎখাত করার বার্তা সংসদের আসন্ন বাজেট অধিবেশনে ‘ইন্ডিয়া’ ব্লকের আরও আগ্রাসী হওয়ার সঙ্কেতবাহী বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।
এ দিন মঞ্চে অখিলেশের হাত ধরে মমতা বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে কাজ করব। বিজেপির হাত থেকে ভারতকে আমরা বাঁচাব। এটা আমাদের প্রতিশ্রুতি। অখিলেশ এখন বিরোধীপক্ষে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হয়েছে। এনডিএ জোটের ভোট শতাংশ হলো ৪৬, ইন্ডিয়া ব্লকের ৫১। এর অর্থ, বিজেপি হেরে গিয়েছে।’
তাঁর সংযোজন, ‘এখনও ধমক-চমকে চেষ্টা করছে, কিন্তু সেই দিন বেশি দূরে নয়, যখন ওরা (বিজেপি) বলবে টা-টা বাই-বাই। জনতা ইতিমধ্যেই ওদের (বিজেপি) এ কথা বলা দিয়েছে। এবার ওদের নিজেদের (বিজেপি) এটা বলতে হবে। সেটা সংসদের কাজ। সংসদ এটা দেখবে।’
বিজেপি’র নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-থাকায় মোদী সরকার এবার পুরোপুরি চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি এবং নীতীশ কুমারের জেডিইউ-র উপরে নির্ভরশীল। এছাড়া মোদী সরকারের পক্ষে ছোট ছোট কিছু দলের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু কখন কোন ইস্যুতে এই দলগুলি সমর্থন তুলে নেবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তখন মোদীকে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে।
মমতার এ দিনের ভাষণে সেই ইঙ্গিত রয়েছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। অখিলেশের কথাতেও একই ইঙ্গিত রয়েছে। সমাজবাদী পার্টির সুপ্রিমো এ দিন বলেন, ‘আপনারা বাংলায় বিজেপিকে হারিয়ে দিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশেও আমরা বিজেপিকে পিছনে পাঠিয়েছি। এরা ক্ষমতায় কিছু দিনের অতিথি হয়ে রয়েছে। দিল্লির এই সরকার পড়ে যাবে। দেশ জেগে উঠেছে। এদের উপড়ে ফেলা শুরু হয়েছে।
সবাই মিলে দেশ, সংবিধান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাঁচাতে একজোট হতে হবে।’ যদিও মমতা-অখিলেশের এই বার্তা প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘একবার (কেন্দ্রকে) ছুঁয়ে দেখুন! তারপর দলগুলো থাকে কি না দেখুন। নরেন্দ্র মোদী শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি একটি চিন্তার প্রতীক। নরেন্দ্র মোদী অপরাজেয়। ওঁরা (তৃণমূল-সপা) আসলে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।’
মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ আপাতত লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখলেও শাসক জোটের মধ্যেই টানাপড়েন রয়েছে বলে ‘ইন্ডিয়া’ ব্লকের নেতৃত্ব মনে করছেন। এনডিএ-র শরিক দলগুলির মধ্যে মন্ত্রক বণ্টন নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে। পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ মমতা-অখিলেশের তা অজানা নয়। তাই তৃণমূলনেত্রীর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘বিজেপির তো সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। টাকা দিয়ে দল কিনছে, অথচ মিনিস্ট্রি দেয়নি। ওরা (এনডিএ শরিকরা) আসলে এত লোভী যে, টাকার সামনে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটা আমরা করব না।’
অখিলেশের কথায়, ‘আমরা নেগেটিভ রাজনীতি করি না। পজ়িটিভ রাজনীতি করি। দেশে পজ়িটিভ রাজনীতির সময় আসছে।’ নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি অযোধ্যা ও রামমন্দিরকে সামনে রেখে এই লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করেছিল। পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি বিভিন্ন ধর্মীয় ইস্যু ভোটে নিয়ে এসেছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল পরিকল্পনাকে পরাস্ত করেই ২৯টি আসনে জয়ী হয়েছে।
একই ভাবে লড়েছে সপা-ও। দু’পক্ষই গেরুয়া শিবিরের বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন। মমতার কথায়, ‘বুকের রক্ত থাকতে সাম্প্রদায়িক বিজেপির সঙ্গে আমরা হাত মেলাব না। আমরা ডরপোক নই, আমরা কাফের নই, গদ্দার নই, আমরা লড়াই করতে জানি।’
অখিলেশের বক্তব্য, ‘দিল্লির ক্ষমতায় যাঁরা বসে রয়েছেন, তাঁরা লাগাতার ষড়যন্ত্র করছেন। দেশে এমন শক্তি রয়েছে যারা বিভাজনের রাজনীতি করছে। শেষ পর্যন্ত ওরা হারবেই। উত্তরপ্রদেশের জনতাও এদের শূন্য করে দেবে।’