একশো দিনের পাল্টা কর্মশ্রী রাজ্য সেরা পশ্চিম মেদিনীপুর
বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ ছিল একশো দিনের কাজ। কিন্ত বিগত প্রায় তিন বছর ধরে প্রকল্পের টাকা আটকে রেখে দিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদণ্ডটাই ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রের মোদি সরকার। রাজ্যে মুখ থুবড়ে পড়ছিল কর্মদিবস। সেই জায়গায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চালু করা ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমেই ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বাংলার গ্রামীণ অর্থনীতি। ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পে চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত গোটা রাজ্যে প্রায় ১১ লক্ষ জবকর্ড হোল্ডারদের জন্য ৫ কোটি ৩২ লক্ষ কর্মদিবস তৈরি করেছে মমতার সরকার। আর কর্মদিবস তৈরিতে রাজ্যসেরা হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শাসক খুরশিদ আলি কাদেরি বলেন, ‘এই প্রকল্পে যত বেশি সংখ্যক জবকার্ড হোল্ডারদের যুক্ত করা যায়, তার জন্য আমরা সবরকম চেষ্টা করছি। পঞ্চায়েত, পূর্ত থেকে জনস্বাস্থ্য সহ সমস্ত দপ্তরের কাজ যাতে জবকার্ড হোল্ডারদের নিযুক্ত করা হয়, তারজন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ ১০০ দিনের কাজ করেও রাজ্যের লক্ষ লক্ষ জবকার্ড হোল্ডারদের টাকা মেটায়নি কেন্দ্র। এনিয়ে বহু লড়াই আন্দোলন করেছে তৃণমূল সরকার। মমতা থেকে অভিষেক—দিল্লির দরবারে কড়া নেড়েছেন একাধিকবার। তবুও ঘুম ভাঙেনি মোদি সরকারের। অবশেষে লোকসভা ভোটের আগে জবকার্ড হোল্ডারদের প্রাপ্ত মেটান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পের অধীনে বছরে অন্তত ৫০ দিন কাজের গ্যারান্টিও দেন তিনি।
চলতি অর্থবর্ষে কর্মশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে অন্তত ৭৫ লক্ষ জবকার্ড হোল্ডারকে ৫০ দিনের কাজ দেওয়ার পরিকল্পনা নেয় পঞ্চায়েতদপ্তর। প্রশাসন সূত্রের খবর, মাত্র সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই রাজ্যজুড়ে মোট ৮৪ হাজার প্রকল্পে ১১ লক্ষ জবকর্ড হোল্ডারদের কাজ দিতে পেরেছে সরকার। মোট কর্মদিবস তৈরি হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৩২ লক্ষ। এরজন্য সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় একহাজার ৭৪ কোটি টাকা। জবকার্ড হোল্ডাররা গড়ে ৪৮ দিন করে কাজ করেছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, কর্মদিবস তৈরিতে শীর্ষে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর। জেলায় ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৫৫৯ জন জবকর্ড হোল্ডার গড়ে ৫৫ দিন করে কাজ করেছেন। গত সাড়ে তিন মাসে রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭১ লক্ষ ৯ হাজার কর্মদিবস তৈরি করতে পেরেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। এরপরেই রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান ও বাঁকুড়া।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রকল্পে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে জঙ্গলমহলের অর্থনীতিও। মেদিনীপুরের রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহাবিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক প্রভাত কুমার শিট বলছিলেন, ‘জঙ্গলমহলের অর্থনীতির উপর আমরা দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছি। বিভিন্ন সময় সমীক্ষা চালিয়ে আমরা দেখেছি, জঙ্গলমহলের প্রায় ৭২ শতাংশ পরিবারেরই দিন গুজরান হয় দিনমজুরি ও বনজসম্পদের উপর নির্ভর করে। তবে, একশো দিনের কাজ চালু হওয়ার পর থেকে জঙ্গলমহলের অর্থনীতি অনেকটাই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। বাসিন্দাদের মোট আয়ের অন্তত ৩০ শতাংশ আসত এই প্রকল্প থেকেই। কিন্তু তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়তে হচ্ছিল বাসিন্দাদের। বহু কর্মদিবস নষ্ট হচ্ছিল। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প কিছুটা সামাল দিয়েছে অবশ্যই। তবে, এই কর্মশ্রী প্রকল্প আগামীদিনে জঙ্গলমহলের কাছে আশীর্বাদ হতে চলেছে।