• শক্তিগড়ের ল্যাংচায় ভেজাল, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের
    বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: শক্তিগড়ের অসাধু ল্যাংচা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার পথে হাঁটছে প্রশাসন। মিষ্টিতে ভেজাল মেশানোর অভিযোগে দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে শক্তিগড় থানায় এফআইআর করা হয়েছে। আইপিসি ২৭২ ও ২৭৩ ধারায় কেস লাগু করে পুলিস তদন্ত শুরু করেছে। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, অধিকাংশ বিক্রেতা মিষ্টিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেন। তেল ও চিনির মানও খারাপ। পোড়া তেলেই ল্যাংচা ভাজা হতো। 


    ডেপুটি সিএমওএইচ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, কালো হয়ে যাওয়া পোড়া তেল ব্যবহার না করার জন্য ব্যবসায়ীদের একাধিকবার বলা হয়েছিল। তাঁরা কর্ণপাত করেননি। কেউ কিছু করতে পারবে না, এমন আচরণ নিয়ে তাঁরা ব্যবসা করছিলেন। ওই ধরনের পোড়া তেলে ভাজা ল্যাংচা খাওয়া হলে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। ওঁরা সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চেয়েছিলেন। তা কোনওভাবে মানা হবে না। 


    স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে থেকে ল্যাংচা তৈরি করে ব্যবসায়ীরা গোডাউনে মজুত করেন। ২১ জুলাইয়ের মতো বছরের কয়েকটি দিনে দোকানগুলিতে ব্যাপক বিক্রি হয়। বাড়তি লাভের আশায় এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ১০-১৫ দিন আগে থেকেই ল্যাংচা তৈরি করে রাখতেন। এক আধিকারিক বলেন, শনিবার উদ্ধার হওয়া ল্যাংচাগুলিতে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। সেগুলি গরম রসে দিলে সুস্বাদু হয়ে যেত। কিন্তু শরীরে নানা ধরনের রোগ দানা বাঁধত। শনিবার শক্তিগড়ে একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পানিহাটির প্রিতম সেন বলেন, স্বাস্থ্যদপ্তরের পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। প্রতি সপ্তাহে দুর্গাপুর থেকে বাড়ি ফিরি। বহুবার শক্তিগড় থেকে ল্যাংচা কিনে নিয়ে যেতাম। এখন বুঝতে পারছি পরিবারের লোকজনদের কী খাইয়েছি। প্রশাসনের উচিত অসাধু ব্যবসায়ীদের দোকান বন্ধ করে দেওয়া। তাদের জেলে পাঠানো উচিত।


    আরএক ক্রেতা অনুপম রায়চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্যদপ্তর অভিযান না করলে এই ‘বিষ’ খেয়ে যেতে হতো। দোকানগুলির সামনের দিকটা ঝাঁ চকচকে, কিন্তু ভিতরটা ততটাই নোংরা। প্রতি সপ্তাহেই স্বাস্থ্যদপ্তরের অভিযান চালানো উচিত। এক মিষ্টি বিক্রেতা বলেন, কিছুজনের লোভের জন্য পুরো ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হল। এই ঘটনার পর শক্তিগড়ের ল্যাংচার জনপ্রিয়তা কমবে। তারজন্য দায়ী ওই অসাধু ব্যবসায়ীরা। বেশি লাভের জন্য তাঁরা মিষ্টিতে ভেজাল মেশাচ্ছেন। যদিও সব ব্যবসায়ী অসাধু নয়। তাঁরা নিয়ম মেনেই মিষ্টি তৈরি করেন। 


    ডেপুটি সিএমওএইচ বলেন, দোকানগুলির বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ওই দোকানগুলিতে তালা ঝোলানোও হতে পারে। ভেজাল মেশানোর জন্য ব্যবসায়ীদের জেলে পাঠানোর আইন রয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের পুলিস সুপার আমনদীপ বলেন, আইন মেনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ব্যবসায়ীরা কত দিন ধরে খাবারে ভেজাল মেশাচ্ছেন, তা তদন্ত করে দেখা হবে।


    স্বাস্থ্য‌দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার ফুড সেফটি আধিকারিকরা ১০টি দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালান। বিভিন্ন গোডাউন থেকে তাঁরা কয়েক কুইন্টাল পচনশীল ল্যাংচা উদ্ধার করেন। সেগুলি ২১ জুলাই বিক্রি করার টার্গেট ছিল ব্যবসায়ীদের। তার আগেই আধিকারিকরা অভিযান চালিয়ে সেগুলি বাজেয়াপ্ত করেন। পচে যাওয়া ল্যাংচা মেশিন দিয়ে গর্ত করে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)