• বৃষ্টির অভাবে পাটে জাগ দেওয়ায় সমস্যা, ক্ষতির আশঙ্কায় কপালে ভাঁজ কৃষকদের
    বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৪
  • সংবাদদাতা, ডোমকল: শ্রাবণের শুরুতেও দেখা নেই বৃষ্টির। বৃষ্টির অভাবে খাঁ খাঁ রোদে মাঠেই পুড়ছে পাটগাছ। এদিকে যত দিন যাচ্ছে বৃষ্টি না হওয়ার চিন্তায় কপালের ভাঁজ ক্রমেই চওড়া হচ্ছে রানিনগর, ইসলামপুর, ডোমকল, জলঙ্গি ব্লক এলাকার পাট চাষিদের। খাতায় কলমে সেই কবেই ঢুকেছে বর্ষা, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তেমন বৃষ্টির দেখা নেই বললেই চলে। এদিকে মহকুমার আবাদি জমির বেশিরভাগ জায়গা জুড়েই রয়েছে পাটের চাষ। পাট কাটার পরে পাটকে জলে পচিয়ে তার থেকে পাটশোলা ও পাট তন্তু আলাদা করতে দরকার হয় প্রচুর জলাশয়ের। কিন্তু ভরা বর্ষাকালেও বৃষ্টি না হওয়ায় এলাকার ডোবা, পুকুরগুলিতে একটুও জল নেই। ফলস্বরূপ জলাশয়ে জলের অভাবে পাট পচাতে ভীষণ সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র জুন মাসে ৭৮ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। যার জেরে মাঠের পাট মাঠেই পুড়ে খাক হয়েছে। এদিকে বৃষ্টির অপেক্ষায় যে আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করবেন চাষিরা, তারও উপায় নেই। কৃষিবিজ্ঞান বলছে, রোপণের ১১০-১১৫ দিনের মাথায় পাট কাটতে হয়। তারপরে দেরি হলে পাটের তন্তুর মান খারাপ হয়। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ দু’শো টাকা প্রতি ঘণ্টা হিসেবে পাম্প মেশিন দিয়ে জল সেচ করে অন্যের পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট পচানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু তা অনেকটাই  ব্যয়বহুল। এভাবে টাকা দিয়ে ভূগর্ভস্থ জল ওঠাতে গেলে লাভের অঙ্ক কতটুকু হাতে আসবে, তাই নিয়ে চিন্তায় পাট চাষিরা। 


    জলঙ্গির এক পাট চাষি খাইরুদ্দিন মন্ডল বলেন, আগে এই সময়গুলোতে এত বৃষ্টি হতো যে, মাঠেই জল জমে যেত। আমরা পাট কেটে সেই জমিতেই জাগ দিতাম। আর এখন পাট পচাতে গেলে পাট কেটে জমিতেই ফেলে রাখতে হচ্ছে। এরপর আশপাশের কোনও পুকুর ভাড়া নিয়ে সেখানে নিয়ে গিয়ে জাগ দিতে হচ্ছে। এত কিছুর পরেও পাটের দাম ঠিকঠাক না পাওয়া গেলে লোকসান হবে। রানিনগরের পাট চাষি ওবাইদুল হকের কথায়, পাটের আবাদে সেভাবে এখন আর লাভ হয় না। এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে প্রায় নয় থেকে দশ হাজার টাকা খরচ হয়। সেই এক বিঘাতে ৩ কুইন্টাল পাট হয় এবং কুইন্টাল প্রতি প্রায় চার-পাঁচ হাজার টাকা করে হিসেব করলে হাতে আসে বারো থেকে পনেরো হাজার টাকা। খরচের টাকা বাদ দিয়ে লাভ আর কতটুটু থাকে? 


    এই অবস্থায় জেলার চাষিদের দাবি, দিন কয়েকের মধ্যে বৃষ্টি না হলে দুর্দশার কথা মাথায় রেখে সরকার পাট চাষিদের পাশে দাঁড়াক। বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তর থেকে তাঁদের খরচে পুকুর, ক্যানেল, জলাশয়গুলোতে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করুক ।


    জেলার কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, গত বছরও অনাবৃষ্টির কারণে, একাধিক জায়গায় পুকুর খনন করে তাতে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সময়ের মধ্যে বৃষ্টি না হলে চাষিদের স্বার্থে গতবারের মতো ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। 
  • Link to this news (বর্তমান)