• ‘দাদাগিরি’তে অতিষ্ঠ, রামলালের রেশন কার্ড করানোর দাবি, সরব ঝাড়গ্রামবাসী
    বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নেদাবহড়া: সকালের আলো ফুটতেই মস্তানি শুরু। খিদে পেলেই বাড়ির ভিতর ঢুকে চলছে তোলাবাজি। তাতেই অতিষ্ঠ গ্রামবাসীরা। অনেকেই মজা করে দাবি করছেন, রেসিডেন্সিয়াল হাতি রামলালের জন্য ‘আধার’ ও ‘রেশন’ কার্ডের ব্যবস্থা করা হোক। তাহলে অন্তত তার খাবারটা নিশ্চিত হবে। সে আর লুট করতে বের হবে না। ছবিটা ঝাড়গ্রাম ব্লকের নেদাবহড়া অঞ্চলের একাধিক গ্রামের। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, রামলাল হানা দিয়ে ভেঙেছে বাড়ির দরজা, রান্নাঘর। একইসঙ্গে দোকান ঘর থেকে ৩০ কেজি আলু খেয়েছে। এছাড়া প্রত্যেকদিন দিনে দুপুরে গ্রামে হানা দিচ্ছে। এতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অনেকেই স্কুল, কলেজ এমনকী টিউশনি ব্যাচেও পড়তে যেতে পারছে না। গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতেও ভয় পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। 


    এদিন কথা হচ্ছিল ঝাড়গ্রামের নেদাবহড়া এলাকার বাসিন্দা শেফালি মাহাতর সঙ্গে। তিনি বলেন, হাতি যেন বাড়ির পোষ্য হয়ে গিয়েছে। যখন তখন চলে আসছে। এতে মানুষ ভীষণ ভয়ে থাকছেন। হাতির আধার ও রেশন কার্ড করা শুধু বাকি। তবে বনদপ্তর কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমাদের রান্না ঘর ভেঙে দিয়েছে। যদি ক্ষতিপূরণের টাকা পাই, তাহলে খুব উপকার হবে। 


    অপরদিকে কথা হচ্ছিল জারুলিয়া জুনিয়র হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী শকুন্তলা মাহাতর সঙ্গে। সে বলে, সারাবছরই গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গলে হাতি থাকে। তাই সকালে আর সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বেরতে পারি না। পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে। টিউশনি তো অনেক দূরের কথা, স্কুলে যেতেও সমস্যা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার ভোরে জারুলিয়ার জঙ্গলে ২০টি হাতির একটি দল প্রবেশ করেছে। তারা স্থানীয় কাজুবাগানের ভিতরে রয়েছে। অপরদিকে শুক্র ও শনিবার রাতে হানা দিয়েছে রামলাল। প্রথমে খাবারের সন্ধানে একটি বাড়ির রান্নাঘরে হানা দেয়। রান্নাঘর ভেঙে খাবারের খোঁজে মগ্ন হয়ে পড়ে। তবে খাবার পায়নি। এরপর স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে রাতেই ৩০ কেজি আলু খেয়ে নেয়। এরপর জঙ্গলের দিকে চলে যায়। 


    প্রসঙ্গত, বর্তমানে জঙ্গল মহলের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল হাতি। হাতির আতঙ্ক উপেক্ষা করেই সাধারণ মানুষ বেঁচে আছেন। জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে ভয় নিয়েই যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। গত আর্থিক বছরে শুধু ঝাড়গ্রাম ডিভিশন এলাকায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই আর্থিক বছরে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। কিছুদিন আগেও হাতির তাড়া খেয়ে একজনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি হাতির হানায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু বনদপ্তর কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। জানা গিয়েছে, শুধু ঝাড়গ্রাম ডিভিশন এলাকায় ৬২টি হাতি রয়েছে। 


    গ্রামবাসী ধ্রুবজ্যোতি পাণ্ডে বলেন, রোজ রাতে হাতি আসছে। প্রাণভয় নিয়েই বাড়ির ভিতরে আটকে থাকছি। এই সমস্যার শেষ কবে হবে, বুঝতে পারছি না। আমার দোকানের প্রায় ৩০ কেজি আলু খেয়ে নিয়েছে রামলাল। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করে চলে যেতে হবে। বনদপ্তরের ভূমিকায় খুবই নিরাশ হচ্ছি। বনদপ্তর জানিয়েছে, গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)