তাজপুরে পাড় ভেঙে সমুদ্রগর্ভে একাধিক রেস্তরাঁ, উদ্বিগ্ন পর্যটকরা
বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, কাঁথি: একদিকে কোটালের কারণে নিম্নচাপ আর অন্যদিকে পুবালি হাওয়ার দাপটে তীব্র সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস। এই জোড়াফলার ধাক্কায় ব্যাপক ভাঙনের কবলে রামনগরের তাজপুর পর্যটন কেন্দ্র। শনিবার ও রবিবার তাজপুর-জলধা থেকে পূর্বদিকে তাজপুরের ‘ফ্রেন্ডসগলি’ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সমুদ্রপাড় বিপজ্জনকভাবে ভেঙে গিয়েছে। সমুদ্রপাড় ভাঙতে ভাঙতে ভিতরে ঢুকে এসেছে এবং অনেকটা অংশই গিলে খেয়েছে। ভাঙনের জেরে পাড়ে অবস্থিত বাঁশ ও হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি ঝুপড়ি আকারের খাবারের দোকান বা ছোট রেস্তরাঁগুলির মধ্যে কয়েকটি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। সমুদ্রতীরে কোনও প্রতিরোধ না থাকায় তাজপুর বনবাংলো পর্যন্তও জল ঢুকে যায়। সব মিলিয়ে তাজপুরের ভাঙন পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ আকার নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এলাকার বাসিন্দা থেকে শুরু করে দোকানদার-ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত। সামনের কোটালে কী পরিস্থিতি হবে, তা ভেবে এখন থেকেই তাঁরা উদ্বিগ্ন। তাঁদের দাবি, তাজপুর থেকে পশ্চিমদিকে শঙ্করপুর পর্যন্ত যেভাবে কংক্রিটের পাড় বাঁধানো হয়েছে, তাজপুরের এই অংশও সেভাবে বাঁধানো হোক। না হলে আগামীদিনে তাজপুর পর্যটন কেন্দ্র অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়বে।
রবিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, সর্বত্র বিধ্বস্ত অবস্থা। খাবারের দোকানগুলির বাঁশ ও ছাউনির নানা সামগ্রী ভেঙেচুরে সমুদ্রতীরে মুখ থুবড়ে পড়েছে। ঝাউগাছগুলি ভেঙে পড়ে রয়েছে। এর আগে কাঠের বল্লি পুঁতে এবং বোল্ডার ও বালির বস্তা ফেলে ভাঙন আটকানোর চেষ্টা হয়েছিল। সেগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। সমুদ্রতীরে ২৫টি খাবারের দোকান রয়েছে। সেখানে পর্যটকরা খাবার খাওয়ার পাশাপাশি বসে সময় কাটাতেন। তার মধ্যে পাঁচ-ছ’টি দোকান পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ভাঙন শুরু হওয়ায় তাঁরা কোনওরকমে মালপত্র সরিয়ে নিয়েছিলেন। তবে আর একবার জলোচ্ছ্বাস হলে বাকি দোকানগুলিরও একই পরিস্থিতি হবে। সুভাষ দলাই, চন্দন বড়াই, উত্তম মাঝি প্রমুখ দোকানদার বললেন, সব শেষ হয়ে গেল। এখন আমরা কোথায় যাব? আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা করুক প্রশাসন। এদিকে তাজপুর-জলধায় একটি ফাঁকা জায়গায় পর্যটকদের গাড়ি পার্কিং করা হতো। সেখানেও ভাঙন শুরু হয়েছে। এখন পার্কিং কোথায় হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। ভাঙন দেখে উদ্বিগ্ন পর্যটকরাও। তাঁরা বলছেন, আমরা এখানে গাড়ি রাখতাম। দোকানগুলিতে খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি সমুদ্রে নামতাম কিংবা শোভা দেখে সময় কাটাতাম। কিন্তু তা বন্ধ হতে বসেছে। অবিলম্বে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পাশেই রয়েছে মা বাশুলি মৎস্যখটি। সেই মৎস্যখটির অধীনে শতাধিক ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী নৌকায় মাছ ধরে এবং শুকনো করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেই মৎস্যখটিও ভাঙনের কবলে।
সংশ্লিষ্ট তালগাছাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান বিশ্বজিৎ জানা, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তপন বড়াই বলেন, তাজপুর-জলধা থেকে একেবারে মোহনা পর্যন্ত সমুদ্রপাড়ের বিপজ্জনক অবস্থা। এই অংশটি কংক্রিট দিয়ে বাঁধাতে হবে। আমরা সেচদপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আর্জি জানিয়েছি। এদিন রামনগর-১ এর বিডিও পূজা দেবনাথ সহ সেচদপ্তরের আধিকারিকরা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। বিডিও বলেন, সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর মিলে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। সেচদপ্তরকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।