সংবাদদাতা, বোলপুর: রাজ্যজুড়ে অরণ্য সপ্তাহ উদযাপন হচ্ছে। প্রায়দিনই কোনও না কোনও স্কুলে যা উদযাপনের কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’-এই কথার গুরুত্ব পড়ুয়াদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন শিক্ষকরা। কিন্তু এবার বনদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে স্কুল প্রাঙ্গণের পাঁচটি পূর্ণবয়স্ক গাছ কেটে ফেললেন খোদ প্রধান শিক্ষক! এমনটাই ঘটেছে বোলপুর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সুরুল জেবি স্কুলে। এই ঘটনায় বোলপুরজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
অভিযোগ, ওই শিক্ষক শুধু গাছ কেটেই ক্ষান্ত হননি। তিনি সেই গাছের গুড়ি স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আনন্দ বাগদির সাফাই, গাছ কাটতে যে বনদপ্তরের অনুমতি লাগে, সেটাই তাঁর জানা ছিল না। সবটাই স্কুলের স্বার্থে করা হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। বনদপ্তর জানিয়েছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তারা জানিয়েছে।
সুরুল জেবি স্কুলটি বেশ পুরনো। স্বাধীনতার প্রাক্কালে ১৯৪৬ সালে এই স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন স্কুলটি বোলপুর পশ্চিম সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত। স্কুলের ক্যাম্পাস ২.৭২ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। পড়ুয়ার সংখ্যাও নেহাত কম নয়, ২২৩ জন। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন করা হয়। সুরুল ছাড়াও মোলডাঙা, মহিদাপুর, দুর্গানগর, রথীন্দ্রপল্লি প্রভৃতি আশপাশের গ্রামের পড়ুয়ারাও এই স্কুলে পড়াশোনা করে। ক্যাম্পাসটি বেশ বড় হওয়ায় সেখানে নানা ধরনের গাছ রয়েছে। কিন্তু অরণ্য সপ্তাহ চলাকালীন সেখানে তিনটি পূর্ণবয়স্ক শিশু, গাব ও আকর গাছ এবং দু’টি খেজুর গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অভিযোগ, বিষয়টি যাতে জানাজানি না হয়, সেজন্য কাটা গাছের গোড়ায় মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। সুরুলের বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় রায়, কবিতা বাউরি, মণি বাউরি বলেন, সম্প্রতি এই প্রধান শিক্ষক স্কুলে যোগদান করেছেন। কিন্তু তারপর স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা না করেই পাঁচটি গাছ কেটে ফেললেন। শিক্ষক হয়ে তিনি যেটা করলেন, তাতে সমাজে ও পড়ুয়াদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।
কেন কাটা হয়েছে ওই গাছ? এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, স্কুল ক্যাম্পাস নিচু জায়গা। তাই বর্ষায় জল ঢুকে ক্লাসে সমস্যা হয়। সেজন্য ট্রাক্টর ঢুকিয়ে মাটি ভরাটের কাজ চলছিল। কিন্তু ওই গাছের জন্য ট্রাক্টর ঢুকতে পারছিল না। সেকারণে গাছ কাটা হয়েছে।
বনদপ্তরের বোলপুরের রেঞ্জ অফিসার জ্যোতিষ বর্মন বলেন, ঘটনার কথা শুনেছি। তদন্ত করে দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বোলপুর পশ্চিম চক্রের স্কুল পরিদর্শক প্রণয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, এবিষয়ে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।