• প্রধান শিক্ষকের জায়গায় স্কুলের অফিসের কাজের তদারকিতে তাঁর শ্যালিকা, বিক্ষোভ
    বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শান্তিপুর: স্কুলের অফিস সংক্রান্ত বিষয়ে তদারকি করেন প্রধান শিক্ষকের শ্যালিকা। মাঝেমধ্যেই মিড ডে মিলের পরিবর্তে পড়ুয়াদের খেতে দেওয়া হয় কেক ও বিস্কুট। স্কুলের সহকারী শিক্ষক কচিকাঁচাদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাস নিতে চাইলেও আপত্তি তোলার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি শান্তিপুরের নৃসিংহপুর গভর্নমেন্ট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকরা। চাপে পড়ে ভুল স্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক।


    নৃসিংহপুর উত্তর কলোনির এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ৮৮। শিক্ষক হয়েছেন তিনজন। অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই দেরি করে স্কুলে ঢোকেন প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত বিশ্বাস। স্কুলের পাশেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি। প্রায়দিনই প্রধান শিক্ষকের শ্যালিকা স্কুলে এসে অফিসে ঢুকে তদারকি করেন। কোন শিক্ষক কোন ক্লাসে পড়াবেন, সেই রুটিন নাকি তিনিই ঠিক করে দেন বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। সন্তানের পড়াশোনা সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও অভিভাবক অভিযোগ জানাতে এলে প্রধান শিক্ষকের শ্যালিকার হুমকির মুখে পড়তে হয় বলে জানান তাঁরা। মিড ডে মিল নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে পড়ুয়াদের অভিভাবকদের। স্কুলে মাঝেমধ্যেই মিড ডে মিলের রান্না বন্ধ থাকে। পরিবর্তে দোকান থেকে কেক, বিস্কুট কিনে পড়ুয়াদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। শনিবার প্রায় জনা তিরিশেক অভিভাবক স্কুলে একত্রিত হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখান। অভিভাবকদের মধ্যে প্রদ্যুৎ চক্রবর্তী, শিলা শীল, দেবীকা বিশ্বাস, রত্না মণ্ডলরা বলেন, স্কুলটা প্রধান শিক্ষকের শ্বশুরবাড়ি হয়ে উঠেছে যেন। তাঁর শ্যালিকা এসে স্কুলের ব্যাপারে প্রায়ই নাক গলান। স্কুলে মিড ডে মিল রোজ রান্না হয় না। এর আগেও প্রধান শিক্ষককে আমরা জানিয়েছিলাম। কোনও লাভ হয়নি। এভাবে তো চলতে পারে না। সেজন্যই বিক্ষোভে নামতে বাধ্য হয়েছি। শুধু অভিভাবকরাই নন, প্রধান শিক্ষকের ব্যবহার নিয়ে ক্ষুব্ধ স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকরাও। অভিযোগ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কচিকাঁচাদের স্পোকেন ইংলিশ শেখানোর জন্য অভিভাবকদের অনুরোধে বাড়তি ক্লাস করাতে চেয়েছিলেন শিক্ষক রিপন মণ্ডল। তাঁকেও ক্লাস করতে বাধা দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। রিপনবাবু বলেন, শিক্ষকতা শুধু আমার পেশা নয়। এটা একটা দায়িত্ব। স্কুলের কচিকাঁচারা নতুন কিছু শিখতে চায়। সেজন্যই মাঝেমধ্যে আমি ওদের ছুটির পর স্কুলেই পড়াতাম। এমনটা হোক, প্রধান শিক্ষক চান না। বিষয়টি নিয়ে নৃসিংহপুর গভর্নমেন্ট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, বিদ্যালয় পরিদর্শকের অনুমতি ছাড়া এই ধরনের আলাদা ক্লাস করানো যায় না বলে আমি জানিয়েছিলাম। কাউকে বাধা দিইনি। আমার শ্যালিকা স্কুলের একজন অভিভাবক হিসেবে মতামত দিয়েছিলেন। এটা যদি অন্যান্য অভিভাবকদের ভালো না লাগে, তাহলে অবশ্যই বিষয়টি আমি শুধরে নেব। মিড ডে মিলে বিস্কুটের বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের যুক্তি, একেকজন পড়ুয়ার জন্য যে সামান্য টাকা বরাদ্দ থাকে, তাতে হাতেগোনা ছাত্রছাত্রী স্কুলে এলে রান্না করা তো সম্ভব হয় না। সেজন্যই বিস্কুটের প্যাকেট দেওয়া হয়েছিল। স্কুলের পরিবেশ অবিলম্বে ফিরিয়ে না আনলে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন অভিভাবকরা।
  • Link to this news (বর্তমান)