সংবাদদাতা, লালবাগ: লালবাগ মহকুমাজুড়ে মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য অব্যাহত। নদী, খালের পাড় থেকে চাষের জমির মাটি কেটে তারা সাফ করে দিচ্ছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লোকালয়ের মধ্য দিয়ে ট্রাক্টরে নির্বিচারে পাচার হচ্ছে সেইসব মাটি। রাজনৈতিক দলের ছাতার তলায় থাকা এই সকল বাহুবলী মাটি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কিছু বলার আগে সাধারণ মানুষকে দশবার ভাবতে হচ্ছে। কেননা পাচারের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই তাঁদের কপালে জুটছে হুমকি, শাসানি। এমনকী মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে পুলিস দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ারও ভয় দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। যদিও মাটি পাচার রুখতে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর ও পুলিস অভিযান চালাচ্ছে। প্রশাসন ও পুলিসের অভিযান মাঝে মধ্যে সফল হলেও পুরোপুরিভাবে পাচার আটকানো যাচ্ছে না। লালবাগ মহকুমা শাসক বনমালি রায় বলেন, অবৈধ মাটি পাচার রুখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও পুলিস প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে।
মুর্শিদাবাদ থানার সিঙ্গা গ্রামের পাশে দিয়ে গিয়েছে গোবরা নালা খাল। বেশ কিছুদিন ধরে স্থানীয় মাটি মাফিয়ারা খালের পাড় সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে পাচার করছে। খালের পাড় থেকে মাটি কেটে পাচারের বিষয়টি নজরে আসতেই প্রতিবাদে সরব হন সিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামবাসীরা প্রতিবাদে নামতেই মাটি মাফিয়াদের কাছ থেকে আসতে শুরু করেছে মারধর থেকে খুনের হুমকি। গ্রামবাসীরা খাল পাড়ের মাটি পাচার ও হুমকির বিষয়টি স্থানীয় থানার পাশাপাশি মহকুমা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তাতেও খাল পাড়ের মাটি পাচার বন্ধ হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কয়েক শতাব্দী প্রাচীন গোবরা নালা খালের পাড় বাঁধ হিসেবে কাজ করে আসছে। উঁচু পাড়ের জন্য বর্ষায় জল ছাপিয়ে দুই পাশের গ্রামগুলিকে প্লাবিত করতে পারে না।
রাজেশ খান, নিয়াকত মণ্ডলরা বলেন, শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ মদতে মাটি মাফিয়ারা খালের পাড়ের মাটি সাফ করে দিচ্ছে। এইভাবে মাটি কাটলে পাড় অর্থাৎ বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়বে। বর্ষায় জলের চাপে পাড় ভেঙে একাধিক গ্রাম প্লাবিত হবে। ফলে হাজার হাজার পরিবার ভোগান্তির শিকার হবেন। প্রশাসনকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি। গ্রাম বাঁচাতে, মানুষের প্রাণ ও সম্পত্তি বাঁচাতে মাটি পাচার রুখতেই হবে। এর জন্য প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।
অন্যদিকে, শনিবার রাতে রানিতলা থানার টিকরবেড়িয়া এলাকার বালিজোনা রোডে অভিযান চালিয়ে পুলিস মাটি বোঝাই দশটি ট্রাক্টর আটক করে এবং ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের বাড়ি মুর্শিদাবাদ পুলিস জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় বলে জানা গিয়েছে। ধৃতদের রবিবার লালবাগ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। রানিতলা থানার পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে টিকরবেড়িয়ার বালিজোনা রোড এলাকায় একটি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার কাজ চলছিল। স্থানীয় সোর্স মারফত খবর পেয়ে রানিতলা থানার পুলিসের একটি টিম অভিযান চালায়। চারজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও মাটি বোঝাই দশটি ট্রাক্টর বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।