সীমান্ত পেরিয়ে দেশে ফিরেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ৮৮৬ পড়ুয়ার
বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৪
রামকৃষ্ণ বর্মন ও ইন্দ্র মহন্ত, মেখলিগঞ্জ ও বালুরঘাট: রবিবার সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরলেন স্মৃতি শাহী, রবিনা শ্রেষ্ঠা, আসুদ মাহমুদ, আমন বিয়াসের মতো বহু পড়ুয়া। উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তাঁরা কেউ ভারত, কেউ বা মালদ্বীপ, কেউ নেপাল কিংবা ভুটান থেকে সেদেশে গিয়েছিলেন। কিন্তু, এখন উত্তপ্ত বাংলাদেশ। বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশজুড়ে জারি রয়েছে কার্ফু। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ছাড়ার হিড়িক পড়েছে ভারত সহ ভিনদেশের পড়ুয়াদের। এদিন ৮৮৬ জন পড়ুয়া এদেশে ফিরেছেন। ভারতে ফিরে সকলের মুখেই ছিল স্বস্তির নিঃশ্বাস।
গত দু’দিনে কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে ৪৬ জন পড়ুয়া ভারতে প্রবেশ করেন। রবিবারও বহু পড়ুয়া চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসেন। প্রশাসনের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, এদিন ৫৫০ জন ছাত্রছাত্রী ভারতে ফিরে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে সিংহভাগই ভারতীয় পড়ুয়া। অন্যদিকে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি ইমিগ্রেশন দিয়ে এদেশে নিয়ে আসা হয় ৩৩৬ জন পড়ুয়াকে। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই মেডিক্যালের পড়ুয়া। এই ৩৩৬ জনের মধ্যে ৫২ জন নেপাল, ২৮৪ জন ভারতের বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এঁদের অধিকাংশই সেখানকার একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া। তাঁদের জন্য সাতটি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
চ্যাংরাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে খোলা হয়েছিল পুলিসি সহায়তা কেন্দ্র। পুলিস ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পড়ুয়াদের জন্য জলখাবারের ব্যবস্থা করা হয়। ইমিগ্রেশনে উপস্থিত ছিলেন মাথাভাঙার অতিরিক্ত পুলিস সুপার সন্দীপ গড়াই, মেখলিগঞ্জের এসডিপিও আশিস পি সুব্বা, মেখলিগঞ্জ থানার ওসি মিঠুন বিশ্বাস প্রমুখ। কোচবিহারের পুলিস সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এদিন ভারতের ৩৩৮ জন, নেপালের ১৮৬ জন, ভুটানের ২৫ জন এবং মালদ্বীপের একজন পড়ুয়া চ্যাংরাবান্ধ দিয়ে এদেশে ফেরেন। সকলকেই নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ভারতে এসে পড়ুয়াদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে ১০টি বাসে করে এনজেপি সহ নানা গন্তব্যে তাঁদের পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হিলি শুল্কদপ্তরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট রঞ্জিত বিশ্বাস বলেন, এদিন মোট ৩৩৬ জন পড়ুয়াকে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নেপালের পড়ুয়া ছিলেন। এছাড়া ভারতের মণিপুর, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের পড়ুয়ারা ছিলেন। এরাজ্যের দূর্গাপুরের বাসিন্দা পড়ুয়া কৌশিক দাস বলেন, আতঙ্কের মধ্যে ক’দিন সেখানে ছিলাম। নিজের দেশে ফিরতে পেরে স্বস্তি।
চাকরিতে সংরক্ষণের আইন সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। নিহতের সংখ্যা একশো ছাড়িয়েছে। চোখে-মুখে আতঙ্কের রেশ নিয়ে ভারতে ফিরেছেন রাজস্থানের বাসিন্দা ডাক্তারি পড়ুয়া আমন বিয়াস। তিনি বলেন, ভারতে ফিরে নিজেকে অনেকটাই নিরাপদ ও সুরক্ষিত মনে হচ্ছে। নেপালের ডাক্তারি পড়ুয়া স্মৃতি শাহী ও রবিনা শ্রেষ্ঠার কথায়, ওই দেশের পুলিসি নিরাপত্তায় রাতেই আমাদের বুড়িমারি সীমান্তে পৌঁছে দেওয়া হয়। শেষমেষ ভারতে ফিরতে পেরে ভালো লাগছে। পড়ুয়ারা অনেকে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। বলেন, হোস্টেলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে জারি করা হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। খাবারের ব্যবস্থা থাকলেও মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিষেবা বন্ধ থাকার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। হিলি, চ্যাংরাবান্ধায় ফিরে এসে তাই অনেককেই অন্যের মোবাইল নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ভিডিও কলে যোগাযোগ করতে দেখা যায়।