নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি ও কোচবিহার: প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের রপ্তানি বাণিজ্য কার্যত স্তব্ধ। কোটা বিরোধী আন্দোলনের জেরে দেশ অগ্নিগর্ভ হওয়ায় স্থলবন্দরে ছু’টি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। যার জেরে পশ্চিমবঙ্গের ছ’টি বন্দরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পণ্য বোঝাই ট্রাকের লাইন। রবিবার সংশ্লিষ্ট বন্দরগুলিতে ট্রাকের সংখ্যা বেঁড়ে দাঁড়ায় প্রায় ছ’হাজারটি। এতে কয়েকশো কোটি টাকার পণ্য নষ্টের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, পণ্য খালাস করতে গিয়ে বাংলাদেশে আটকে পড়েছেন প্রায় দু’হাজার ভারতীয়। তাঁরা ট্রাক ড্রাইভার ও খালাসি। তাঁদের সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় ভারতীয় রপ্তানিকারকরা। ইতিমধ্যে তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এবিষয়ে যোগাযোগ করেছেন।
কয়েকদিন ধরেই কোটা বিরোধী আন্দোলনে পুড়ছে বাংলাদেশ। শনিবারই যার প্রভাব পড়ে আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাণিজ্যে। ওই দিন জলপাইগুড়ির ফুলবাড়ি, বনগাঁর পেট্রাপোল ও বসিরহাটের ঘোজাডাঙা স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। রবিবার কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা ও মালদহের মহদিপুর বন্দরও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি বন্দর দিয়ে পণ্য বোঝাই কিছু ট্রাক বাংলাদেশে যায় রবিবার। শনিবার পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট বন্দরগুলিতে পণ্য বোঝাই ট্রাকের সংখ্যা ছিল প্রায় দু’হাজার। এদিন সেই সংখ্যা বেড়ে ছ’হাজার হয়েছে। যারমধ্যে ফুলবাড়িতে ৩৫০টি এবং চ্যাংরাবান্ধায় ২৫০টি রয়েছে। সেগুলিতে কাঁচালঙ্কা, পেঁয়াজ, ফল ও পাথর রয়েছে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল এক্সপোর্টার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, এখন প্রতিটি বন্দরে পণ্য বোঝাই ট্রাকের লম্বা লাইন। রাজ্যের ছ’টি বন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের সংখ্যা প্রায় ছ’হাজার। তাতে কয়েকশো কোটি টাকার পণ্য রয়েছে। যারমধ্যে বেশকিছু পণ্য পচনশীল। এমন পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে কোটি কোটি টাকার পণ্য পচে নষ্ট হতে পারে।
অন্যদিকে, দেশের অস্থিরতার জেরে বন্দরে ছুটি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। এদিনও তাদের ছ’টি স্থলবন্দরে কোনও কাজ হয়নি। ফলে বাংলাদেশ স্থলবন্দরে আটকে পড়েছেন ভারতীয় পণ্য বোঝাই ট্রাকের চালক ও খালাসিরা। চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে আটকে পড়েছেন ৩৪ জন ভারতীয় ট্রাক চালক। যারমধ্যে ২৫ জন চ্যাংরাবান্ধার ও ন’জন অসমের। চারদিন ধরে তাঁরা সেখানে আটকে রয়েছেন। এদিন সীমান্তের জিরো পয়েন্টে গিয়ে কাস্টমস অফিসারদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন চ্যাংরাবান্ধা ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। সংগঠনের সম্পাদক আব্দুল সামাদ বলেন, বাংলাদেশে আটকে পড়েছেন পাথর বোঝাই ট্রাকের ৩৪ জন চালক। ট্রাক থেকে মাল খালাস করা হয়নি। গাড়িগুলি খালি না হলেও চালকদের ফিরিয়ে আনার অনুরোধ কাস্টমস অফিসারদের করেছি।
একই পরিস্থিতি ফুলবাড়ি, হিলি, মহদিপুর, পেট্রাপোল ও ঘোজাডাঙা বন্দরের। ওয়েস্ট বেঙ্গল এক্সপোর্টার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদক বলেন, সংশ্লিষ্ট ছ’টি বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পণ্য বোঝাই প্রায় হাজারটি ট্রাক পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি ট্রাকে ড্রাইভার ও খালাসি মিলিয়ে ভারতীর সংখ্যা প্রায় দু’হাজার জন। বাংলাদেশ সরকার ছুটি ঘোষণা করায় সেই দেশের বন্দরে কোনও কাজ হচ্ছে না। সরকারিভাবে ক্লিয়ারেন্স না মেলায় ট্রাক থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে না। ড্রাইভাই ও খালাসিরা সেই দেশে আটকে পড়েছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগও করতি পারছি না। এব্যাপারে যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছি। বিষয়টি ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনকে জানানো হয়েছে। তারা এব্যাপারে দেশের বাণিজ্য মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।