• ‘যাহ, গঙ্গার মেট্রো বন্ধ!’ মুখ ভার খুদে সায়নের
    বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৪
  • দীপন ঘোষাল, হাওড়া : অনেকদিন ধরে বাবার কাছে গল্প শুনছে হাওড়া মেট্রোর। সে এক স্বপ্নের রেলগাড়ি। ‘এক্কেবারে গঙ্গার নীচ দিয়ে চলে বাবা?’ অবাক হয়ে বারবার জিজ্ঞেস করত একরত্তি সায়ন। বাবার কাছে বায়না, রবিবার তাকেও নিয়ে যেতে হবে ধর্মতলায়। সেখানে তৃণমূলের একুশের সমাবেশ। সে যাবে কারণ, তাকে গঙ্গার নীচ দিয়ে যেতে যেতে মাছ, কুমির দেখতেই হবে। কিন্তু হায়! রবিবার বলে গঙ্গার মেট্রো যে বন্ধ। হাওড়া স্টেশনে এসে মন খুব ভেঙে গেল সায়নের। ওর জন্য বাবারও মন খারাপ।


    হুগলির ব্যান্ডেলের বাসিন্দা সোমনাথ বাগ। তিনি তৃণমূলের কর্মী। হাজার কাজ ফেলে প্রতিবছর একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দেন। কথায় কথায় একদিন ছোট ছেলেকে শুনিয়েছিলেন, গঙ্গার তলা দিয়ে মেট্রো চলে তার গল্প। মাটির তলা দিয়ে নয়, নদীর নীচ দিয়ে হু হু করে ছোটে সে রেলগাড়ি। অবাক চোখে বাবার কাছ থেকে দেশের প্রথম আন্ডার ওয়াটার মেট্রোর গল্প শুনেছিল পাঁচ বছরের ছোট্ট সায়ন। রামকৃষ্ণ ভবনের নার্সারির পড়ুয়া সে। শনিবার নাছোড়বান্দা হয়ে বাবার কাছে বায়না জুড়েছিল, তাকেও এবার যেতে হবে একুশের সমাবেশে। মজা করে ওর মা জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুই এত ছোট ওখানে গিয়ে কী করবি?’ মুহূর্তের মধ্যে সায়ন জবাব দিয়েছিল, ‘গঙ্গার তলা দিয়ে যাব। মাছ দেখব, কুমির দেখব।’ অগত্যা ছেলের বায়নার কাছে হার মেনে সোমনাথবাবু রবিবার সাত সকালে বাড়ি থেকে বেরনোর সময় সঙ্গে নিয়েছিলেন পুঁচকে ছেলেকেও। বাবার কাঁধে চেপে হাওড়া স্টেশনে এসে আনন্দে প্রায় হাত পা ছুঁড়ছিল সায়ন। কিন্তু মন ভাঙতে সময় লাগল না।  রবিবার বলে মেট্রো বন্ধ। এতকিছু করেও গঙ্গার নীচ দিয়ে একটুও যাওয়া হবে না? রীতিমত মুষড়ে পড়ে ব্যান্ডেল তৃণমূল কংগ্রেসের দলের সঙ্গে আসা একরত্তি বাচ্চাটি। বাকিদের লক্ষ্য তখন সভাস্থল হলেও, তার আসা বৃথা হয়ে গেল। সোমনাথবাবু অনেক চেষ্টা করে সামলালেন পুত্রকে। কলকাতায় দেখার জিনিস কি কম আছে নাকি? বাবার আশ্বাসে শেষমেশ শান্ত হল ছেলে। 


    সোমনাথবাবুরও মুখ ভার। বললেন, ‘ছেলে অনেক বায়না করছিল। আমার সঙ্গে এসেছিল গঙ্গার নীচের মেট্রো চাপবে বলে। এসে শুনেছে বন্ধ। দুঃখ পেয়েছে খুব। বললাম, চল তোকে কলকাতা দেখাব। দিদির মিটিং দেখাব। তাতে একটু শান্ত হল। পরে একদিন এসে ওকে মেট্রো চাপাব। ও অনেক আশা করে আমার কাছে মেট্রো দেখতে চেয়েছে। আমি বাবা হয়ে কি সেটা না মেনে থাকতে পারি।’ সায়ন আধো আধো গলায় বলল, ‘ভালো লাগছে না আমার। আমি মাছ দেখব আর কুমির দেখব। মেট্রোও দেখব। কিন্তু বাবা তো বলছে ওটা বন্ধ।’ 


    অন্যদিকে একুশের সভার জন্য প্রতিবছরের মত এবারও উপচে পড়া ভিড় ছিল হাওড়া স্টেশনে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে তৃণমূলের অগণিত কর্মী-সমর্থক হাওড়া স্টেশন এসে পৌঁছন সকাল থেকে। বেলা যত বেড়েছে ততই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভিড়। সকালের দিকে হাওড়া ব্রিজ এবং ফেরি ব্যবহার করে ধর্মতলা রওনা দেন অনেকে। বেলা বাড়তেই ভিড়ের চাপে বন্ধ করে দিতে হয় ফেরি পরিষেবা। তারপর হাওড়া স্টেশন দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ হেঁটেই ধর্মতলায় পৌঁছন। রবিবার হওয়ায় যানবাহনের সংখ্যা কম ছিল। ফলে বড়সড় যানজটের সমস্যা তৈরি হয়নি হাওড়া শহরে।
  • Link to this news (বর্তমান)