পেট্রাপোল ও ঘোজাডাঙা সীমান্তে বন্ধ বাণিজ্য, ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা
বর্তমান | ২২ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, বনগাঁ ও বসিরহাট: কোটা সংস্কার আন্দোলন ও অশান্তির জেরে গত কয়েকদিন ধরে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। শতাধিক মানুষের মৃত্যু, কারফু, সেনা—কিছুই বাদ যায়নি। প্রতিবেশী দেশের এই টালমাটাল পরিস্থিতির ক্ষতিকর প্রভাব ক্রমশ থাবা বসাচ্ছে সীমান্ত এলাকার বাণিজ্যে। উত্তর ২৪ পরগনায় পেট্রাপোল ও ঘোজাডাঙা সীমান্ত দিয়ে পণ্যবোঝাই ট্রাকের চলাচল কার্যত থমকে গিয়েছে। এই অচলাবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে থাকলে সার্বিক পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন হয়ে উঠবে বলে শঙ্কিত সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার ছোট ব্যবসায়ী, দোকানদার, দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের কারবারিরা।
পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে শনিবার সকালে কিছু পণ্যবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকলেও কিছুক্ষণ পরই বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময়ের মধ্যে পচনশীল পণ্যের কয়েকটি ট্রাক কোনওরকমে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। রবিবার পুরোপুরি বন্ধ ছিল যাতায়াত। সীমান্তে গিয়ে দেখা গেল, স্থলবন্দর শুনশান। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কাউন্টারে বসেছিলেন বাপ্পা ঘোষ। তিনি বললেন, ‘সকাল থেকে তিন ঘণ্টা হলো, একজন মাত্র যাত্রী এসেছেন টাকা ভাঙাতে। খুবই খারাপ অবস্থা।’ পরিবহণ ব্যবসায়ী থেকে হোটেল মালিক, এমনকী কুলিরাও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন। অটো-টোটো ছিল হাতেগোনা। সীমান্তের ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ থেকে কিছুটা দূরে বসেছিলেন কয়েকজন কুলি। তাঁরা জানালেন, সকাল থেকে কোনও যাত্রীর দেখা নেই। বনগাঁ শহরের ব্যবসা ও বিক্রিবাটাতে বাংলাদেশ পরিস্থিতির ভালোই প্রভাব পড়ে। বাটার মোড়ে প্রতিদিন বহু বাংলাদেশি নাগরিক কেনাকাটা করতে আসতেন। দৈনন্দিন প্রয়োজনের নানা জিনিসপত্র কিনে দেশে ফিরে যেতেন তাঁরা। রাতে থাকতে হলে বনগাঁতেই হোটেল নিতেন তাঁরা। গত কয়েকদিনে এসব প্রায় বন্ধ। বনগাঁ টাউন কালীবাড়ির এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাংলাদেশিরা এখান থেকে মুদিদ্রব্য থেকে শুরু করে কসমেটিকস—সবই কিনতেন। যত তাড়াতাড়ি বাংলাদেশের সমস্যা মিটে যায়, আমাদের ততই মঙ্গল।’
বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্তেও একই ছবি। রবিবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেল সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে পণ্যবোঝাই ট্রাক। বাংলাদেশের দিক থেকে যাঁরা ভারতে ঢুকছেন, তাঁদের চোখেমুখে আতঙ্ক স্পষ্ট। ট্রাকচালক রফিকুল ইসলাম বললেন, ‘দু’দিন ধরে এখানেই ট্রাক নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট বন্ধ। কবে সব স্বাভাবিক হবে, জানি না।’ ঘোজাডাঙা ক্লিয়ারিং ফরওয়ার্ডিং অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সঞ্জীব মণ্ডল বলেন, ‘আমরা কীভাবে এই গাড়িগুলি ওপারে নিয়ে যাব, বুঝতে পারছি না। বাংলাদেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ বলেই এই সমস্যা। কারণ, এখন তো কাগজকলমে কিছু হয় না। সবটা ডিজিটাল। ফলে যতক্ষণ না ইন্টারনেট পরিষেবা স্বাভাবিক হচ্ছে, ততক্ষণ পণ্যবোঝাই ট্রাক আমরা ওপারে পাঠাতে পারছি না। সব্জি, ফল ইত্যাদি পচনশীল পণ্যের ট্রাকগুলি নিয়েই চিন্তা বেশি।’ সেই সঙ্গে এপারের মাছ ব্যবসায়ীরা অনলাইনে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের টাকা পাঠাতে পারছেন না। নতুন অর্ডারও দিতে পারছেন না। বাংলাদেশের ইলিশ আসা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। এক মাছ ব্যবসায়ীর কথায়, ‘বাংলাদেশে অশান্তি জারি থাকলে এপারে আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের বিপদ বাড়বে। পদ্মার ইলিশ আমদানি নিয়েও চিন্তা বাড়ছে।’