• ‘কখনও শুনেছেন টাকা দিয়ে মন্ত্রিত্ব দেয়নি’, চন্দ্রবাবু-নীতিশ নিয়ে বার্তা মমতার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২২ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা:  লোকসভার আগে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের স্লোগান ছিল, -‘এবার চারশো পার’। ভোটের পরে দেখা গেল, চারশো দূরে থাক, তিনশোও হল না, এমনকি ম্যাজিক ফিগার ২৭২ আসনও পার করতে পারেনি বিজেপি।থামতে হয়েছিল ২৪০ আসনে। শেষ অবধি তৃতীয়বারের জন্য শপথ নিতে গিয়ে মোদী-অমিতকে তাকাতে হয়েছে শরিকদের দিকে। প্রায় এক দশক পর ফের ভারতীয় রাজনীতিতে ফিরেছে জোট সরকার। এরফলে নাটকীয়ভাবে দিল্লির অলিন্দে গুরুত্ব বাড়িয়েছেন মোদী সরকারের দুই শীর্ষ শরিক, অন্ধ্রের তেলুগু দেশম পার্টি ও বিহারের জনতা দল (ইউনাইটেড)।এবার একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে দুই শরিক নেতা, চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতিশ কুমারের দিকে তীব্র আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তৃতীয় মোদী সরকারের শপথগ্রহণের আগে থেকেই দিল্লিতে মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন চন্দ্রবাবু। এবারে লোকসভার পাশাপাশি অন্ধ্রের বিধানসভা নির্বাচনেও কার্যত ঝড় তুলে দিয়েছে তেলুগু দেশম বা টিডিপি।

    কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, নানা আকাশকুসুম দাবি সামনে রেখেছিলেন চন্দ্রবাবু। তীব্র দরকষাকষি চলেছে। স্পিকারের পদ-সহ একাধিক মহার্ঘ্য মন্ত্রকের দিকে নজর রেখেছিল তারা। কিন্তু শেষ অবধি চন্দ্রবাবুর কপাল খোলেনি। একজন মন্ত্রী ও একজন উপমন্ত্রী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাঁকে। এমনকি যে পূর্ণমন্ত্রক পেলেন, সেই সেই অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক খুব উঁচুদরের বলে পরিচিত নয়। হয়েছেন তেলুগু দেশমের রামমোহন নাইডু। নীতিশ কুমারের কপালেও একই ব্যাপার। লালন সিংহ পঞ্চায়েতি রাজ মন্ত্রক পেয়েছেন। এটাকেও খুব বড়মাপের লাভ বলা যায় না।এবার একেই লক্ষ্য করে তোপ দাগলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্যত বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে রবিবার একুশের মঞ্চ থেকে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘আমরা কখনও বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাব না। এজেন্সি দিয়ে আমাদের থামানো যাবে না। আমরা সব সময় মনে রাখি, যো ডরতে হ্যায়, উও মরতে হ্যায়!’এর পরই অখিলেশ যাদবকে পাশে বসিয়ে কার্যত বোমা ফাটান মমতা।

    তিনি বলেন,’এই যে বিজেপি। এবারে তো মেজরিটি পায়নি। কিসি কো কিসি কো খরিদ করকে, কেলেঙ্কারি করকে…(কাউকে কিনে নিয়ে, কোথাও কেলেঙ্কারি করে) কভি শুনা, রুপিয়া দে কে মিনিস্ট্রি নেহি দিয়া? (কখনও শুনেছেন, টাকা দিয়ে মন্ত্রক দেয়নি?) জীবনে কখনও শুনিনি, টাকা দিয়ে দল কিনে নেওয়া যায়, মন্ত্রিত্ব না দিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যায়। আর এই সব লোকেরাও তেমন! আরে এত ভীতু! ইতনা কাফের হ্যায়, ইতনা গন্দা হ্যায়, ইতনা লোভী হ্যায়, কি রুপিয়া কা পাস কিম্মত চুকা দিয়া (এতই নোংরা, এতই লোভী যে, টাকার কাছে সম্মান বিকিয়ে দিল)”! মঞ্চে তখন অঝোরে বৃষ্টি। মমতা বলে চলেন, ‘আমরা এসব করব না। আমরা লড়াই করব। আমরা বিশ্বাস করি, ‘রোশনি চাঁদ সে হোতা হ্যায়, সিতারো সে নেহি, মহব্বৎ তৃণমূল সে হোতা হ্যায়, আউর কিসিসে নেহি!’ইতিমধ্যেই এই নিয়ে রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করেছে। টিডিপি ও জেডি(ইউ)-এর পাশাপাশি শরিক হিসেবে দিব্যি মন্ত্রিত্ব পেয়ে গিয়েছেন বিহারের জিতনরাম মাঁজি, চিরাগ পাসওয়ান।

    এককালে নীতিশের সঙ্গেই ছিলেন জিতনরাম। ২০১৫ সালে এই মহাদলিত নেতা আরও ১৮ জনকে নিয়ে দল ছেড়ে গঠন করেন হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা। এবার সেই নিয়েও নীতিশের দিকে খোঁচা মেরেছেন তিনি। বলেছেন, “২০১৫ সালে যখন দল ছেড়ে বেরিয়ে যাই, নীতিশজি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘জিতন মাঁজি সে পার্টি চলেগা? না পয়সা হ্যায়, না কুছ!’ আজ আমি বলতে চাই, দল চলছে, দারুণ গতিতে চলছে!’কিন্তু এই প্রেক্ষিতেও, টাকা দিয়ে মন্ত্রিত্ব না দেওয়ার অভিযোগ কার্যত নজিরবিহীন। বস্তুত, যেভাবে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে পিছিয়ে ছিল, তাতে তেলুগু দেশম বা জেডি(ইউ) এত অল্পে সন্তুষ্ট হবে, সেটা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও অনেকে আশা করেননি। শেষ অবধি সফলভাবেই নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে পেরেছে বিজেপি। কিন্তু এবার সরাসরি তাকে কাঞ্চনমূল্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে নিঃসন্দেহে রাজনীতির পারদ কয়েক গুণ চড়িয়ে দিলেন মমতা।

  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)