• চাঁদিপুরা ভাইরাসের দাপট গুজরাটে, সতর্কতা বাংলায়
    এই সময় | ২২ জুলাই ২০২৪
  • মাঝমধ্যেই সংক্রমণটা হামলা চালিয়েছে, প্রাণ কেড়েছে বটে। তবে মহামারী হিসেবে প্রায় ১৪ বছর পরে ভারতে ফের হানা দিলো চাঁদিপুরা ভাইরাস। যার সংক্রমণের কবলে এখন গুজরাটের অন্তত ১০টি জেলা। এই দফায় এখনও পর্যন্ত এই সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন মোট ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে গুজরাট, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে।বৃহস্পতিবার এই ভাইরাসের হামলায় প্রথম মৃত্যু ‘কনফার্ম’ করেছিল পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি (এনআইভি)। রবিবার পর্যন্ত ‘কনফার্ম্‌ড’ মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯-এ। মৃতদের অধিকাংশই শিশু-কিশোর-কিশোরী। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

    ডিরেক্টর জেনারেল অফ হেল্‌থ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস) অতুল গোয়েলের নেতৃত্বে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল, দিল্লি এইম্‌স, নিমহ্যান্স-এর মতো প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা চাঁদিপুরা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় শুক্রবার একটি বৈঠকও করেন। এ রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, বাংলায় আগে কখনও চাঁদিপুরা ভাইরাসের সংক্রমণ না-হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সতর্ক রয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের জনস্বাস্থ্য শাখা।

    * চাঁদিপুরা ভাইরাসের পরিচয়

    # চাঁদিপুরা ভেলিকিউলোভাইরাস আদতে র‍্যাবডোভিরিডি গোত্রের আরএনএ ভাইরাস, যা মানব শরীরে হানা দিলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে মস্তিষ্কেও (এনসেফালোপ্যাথি)

    # ১৯৬৫ সালে মহারাষ্ট্রের চাঁদিপুর গ্রামে এই ভাইরাসটির অস্তিত্ব প্রথম চিহ্নিত হয় বলে ভাইরাসটির এমন নামকরণ

    # এর প্রকোপ মূলত দেখা যায় ভারত ও পশ্চিম আফ্রিকায়

    * বাহক পরিচয়

    # বেলে মাছি বা স্যান্ড ফ্লাই, এডিস মশা এবং এঁটুলি (টিক) মাকড় চাঁদিপুরা ভাইরাসের বাহক। এদের কামড়েই ছড়ায় সংক্রমণ

    # এর মধ্যে বেলে মাছিই সব চেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়ায় এবং তা মূলত গ্রামাঞ্চলে

    # মাটির বাড়ির ফাটলে কিংবা ইটের বাড়ির খাঁজে বালির মধ্যে জন্মায় বেলে মাছি

    * উপসর্গ কেমন

    # চাঁদিপুরা ভাইরাসের উপসর্গের সঙ্গে মিল রয়েছে ফ্লুয়ের

    # জ্বর, গা-হাত-পায়ে ব্যথা, বমি, ডায়েরিয়ার পাশাপাশি রোগীর খিঁচুনি, রোগীকে জ্ঞান হারাতেও দেখা যায়

    # সংক্রমণ মস্তিষ্কে ছড়ালে হয় এনসেফালোপ্যাথি, রোগী কোমাতেও চলে যায়

    # অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১৪ বছরের কম বয়সিরা আক্রান্ত হয়

    * গুজরাটে কী হয়েছে?

    # শুধু জুলাইতেই ৭৮ জন চাঁদিপুরা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন

    # আক্রান্তদের মধ্যে ৭৫ জনই গুজরাটের, ২ জন রাজস্থানের এবং ১ জন মধ্যপ্রদেশের

    # সব চেয়ে বেশি প্রকোপ দেখা দিয়েছে সবরকান্তা, আরাবলি, মেহসানা, রাজকোট, মরবি, পঞ্চমহল, এমনকী আমেদাবাদ শহরেও

    # আক্রান্তদের নমুনা পাঠানো হয়েছে পুনের এনআইভি-তে

    # মৃত চার বছরের এক শিশুর নমুনায় চিহ্নিত হয়েছে চাঁদিপুরা ভাইরাস

    # চাঁদিপুরা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু ২৮ জনের, যার মধ্যে ১৫ জনই শিশু

    # মৃতদের মধ্যে ২৬ জনই গুজরাটের, বাকি দু’জনের এক জন রাজস্থানের এবং অন্য জন মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা

    * ভয় যেখানে

    # চাঁদিপুরা সংক্রমণের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, চিকিৎসা হয় লক্ষণ-উপসর্গ ভিত্তিক

    # এই সংক্রমণের মৃত্যুহার মারাত্মক বেশি (প্রায় ৫৭-৭৫%)

    # চাঁদিপুরা ভাইরাসের বাহক বেলে মাছি, এডিস মশা ও এঁটুলি মাকড় সর্বত্র মেলে

    # বর্তমানের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভিন রাজ্য থেকে সংক্রমণ আসার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার নয়

    * অতীত সংক্রমণ

    # এর আগে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, ওডিশা, বিহার, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কেরালায় এই সংক্রমণের নজির রয়েছে

    # ২০০৩-এ অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে ৩২৯ জন আক্রান্ত, মৃত্যু হয় ১৮৯ জনের

    # ২০০৯-এ মধ্য ও পশ্চিম ভারতে ৫২ জন আক্রান্ত হয়েছিল, মারা গিয়েছিল ১৫ জন

    # ২০১০-এও গুজরাট ও রাজস্থানে ৫০ জন আক্রান্ত হয়েছিল, মারা গিয়েছিল ১৭ জন

    # ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৯-এ গুজরাটে বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েক জন আক্রান্ত ও মৃতের খোঁজ মিলেছিল
  • Link to this news (এই সময়)