সম্যক খান, মেদিনীপুর: একেই বোধহয় বলে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। শাস্তির খাঁড়া ঝুলছে পশ্চিম মেদিনীপুরে তৃণমূলের সাত পুরপ্রধান থেকে শুরু করে প্রায় পঞ্চাশের বেশি পঞ্চায়েত প্রধানের উপর। শুধু তাই নয়, সেইসঙ্গে আতঙ্কে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্লক, অঞ্চল ও শহর সভাপতিরাও। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তিনমাসের মধ্যে সাংগঠনিকভাবে স্তরে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর তা শুনেই ঘুম ছুটেছে নেতাদের। নিজেরাই বুঝতে পারছেন, এলাকায় দলের ভরাডুবির পিছনে নিজেদের দায় কতটা। আর তাই অভিষেকের হুমকির পরই নেতাদের অনেকেরই ফোন সুইচড অফ। কারও কারও ফোন খোলা থাকলেও তা ধরছেন না। কেউ আবার বলেছেন, দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, মাথা পেতে গ্রহণ করবেন।
লোকসভা ভোটের (2024 Lok Sabha Election) আগে থেকেই কখনও সাংগঠনিক বৈঠকে, আবার কখনও প্রকাশ্য সভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, কাউন্সিলাররা যদি ভাবেন যে পুরভোটে তাঁরা জানপ্রাণ লড়িয়ে জিতবেন আর লোকসভা বা বিধানসভা ভোটের সময় সেই শ্রম দেবেন না, তা হবে না। খারাপ ফল হলে তার দায় বর্তাবে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড বা এলাকার জনপ্রতিনিধি ও নেতার উপরও। নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। এই হুঁশিয়ারির পরও এবার লোকসভা ভোটের ফলাফলে দলের অনেকের গাফিলতি স্পষ্ট হয়েছে। অভিষেকের আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। গ্রামাঞ্চল তৃণমূলকে (TMC) রক্ষা করলেও ভরাডুবি ঘটেছে শহরাঞ্চলে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় সাতটি পুরসভার মধ্যে ছটিতেই ভরাডুবি ঘটেছে শাসকদলের!
মেদিনীপুর লোকসভার (Medinipur Lok Sabha Constituency) অধীনে দুটি পুরসভা মেদিনীপুর ও খড়গপুর। দুটিতেই লজ্জাজনক হার হয়েছে তৃণমূলের। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান সৌমেন খান ও খড়গপুরের পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষও নিজের ওয়ার্ডে তৃণমূলকে লিড দিতে পারেননি। খড়গপুরে ২২ হাজার ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল আর মেদিনীপুরে তৃণমূল পিছিয়ে প্রায় ৬ হাজারে। দুই পুরসভার কিছু কাউন্সিলর ও নেতার বিরুদ্ধে ভোটের আগে গোপনে মন্দারমণি গিয়ে বিরোধী দলনেতার সঙ্গে ‘গোপন’ বৈঠক করার অভিযোগও উঠেছিল সোশাল মিডিয়ায় (Social Media)। দুটি পুরসভা ছাড়াও তৃণমূলের দখলে থাকা ২৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েতেও লিড নিয়েছে বিজেপি। ফলে দুই পুরপ্রধানের পাশাপাশি শাস্তির খাঁড়া ঝুলছে ২৩ জন প্রধানের উপরও।
মূলত গ্রামীণ এলাকার উপর ভর করেই সাংসদ হয়েছেন জুন মালিয়া (June Malia)। প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে বিজেপির থেকে আসনটি ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে তৃণমূল। কিন্তু জিতলেও যে পারফরম্যান্সহীন নেতারা ছাড় পাচ্ছেন না, তা রবিবার ধর্মতলার একুশের মঞ্চ থেকে (21 July TMC Rally) অভিষেকের হুঁশিয়ারিতে আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। এখন এনিয়ে জোর চর্চা চলছে দলের অন্দরেই। অনেক নেতা ভেবেছিলেন প্রতিবার ভোটের আগেই দলের শীর্ষনেতারা এই হুমকি দিয়ে থাকেন। তবে দল ভালো ফল করলে সব ধামাচাপা পড়ে যায়। মেদিনীপুরেও দেখা গিয়েছিল যে জুন মালিয়া জেতার পর মেদিনীপুরে এক পার্টিতে দুই শহরের ‘হেরো’ ওয়ার্ডগুলির কাউন্সিলরদের একাংশই সবথেকে বড় বড় ফুলের তোড়া নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তাঁদের কপালেও যে দুঃখ আছে, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলছেন, ”এটা তো হওয়ারই ছিল। দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো ভোটের আগে থেকেই দলের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রেখেছেন। যাঁরা তা উপেক্ষা করেছেন, তাঁদের ফল ভোগ করতে হবে।” আর মেদিনীপুরের পুরপ্রধান সৌমেন খানের কথায়, ”দল যা সিদ্ধান্ত নেবে, সবার তা মেনে চলা উচিত।”