‘আমাদেরও না গুলি করে…’, বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা শোনালেন শুভদীপ
এই সময় | ২২ জুলাই ২০২৪
একের পর এক বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গুলি-বোমার শব্দে কান পাতা দায়। রীতিমতো প্রাণ হাতে করে ফিরতে হয়েছে দেশে। অশান্ত বাংলাদেশ থেকে ফিরে নিজেদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন হাওড়ার উলুবেড়িয়ার মেডিক্যাল পড়ুয়ারা।সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুতে আন্দোলনের কারণে উত্তাল বাংলাদেশ। যদিও বর্তমানে সেই আন্দোলনের আঁচ কিছুটা কমলেও এখনও সেই আতঙ্কের দিনগুলো ভুলতে পারছে না বাংলাদেশে ডাক্তারি পড়তে যাওয়া উলুবেড়িয়া লকগেট পাড়ার বাসিন্দা শুভদীপ মিস্ত্রী। সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা ভাবলেই শিহরিত হয়ে উঠছেন শুভদীপ। রবিবার বিকেলে বাংলাদেশ থেকে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। চোখে মুখে এখন আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। শনিবার নিজেদের জীবনবাজি নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল শুভজিৎ সহ ১০৬ জন ডাক্তারি পড়ুয়া।
এদিন নিজের বাড়িতে বসে সেই দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তৃতীয় বর্ষের এমবিবিএস পড়ুয়া শুভজিৎ জানায়, গত মঙ্গলবার কলেজে ক্লাস করার সময় অশান্তির খবর কানে আসে। বিকেলে কোনওরকমে কলেজ থেকে হস্টেলে ফেরা গিয়েছে। তারপর থেকেই রাতের ঘুম উড়ে যায় শুভজিৎ সহ হস্টেলে থাকা অন্যান্য ছাত্রদের। শুভজিৎ জানায়, ছাত্র আন্দোলন যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, সেই দিনগুলোতে যাঁরা বাংলাদেশে ছিল, তাঁরা ছাড়া আর কেউ জানতে পারবে না।
তিনি জানান, আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে একের পর এক বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বোমা-গুলির শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে গিয়েছে। হস্টেলে খাবার ব্যাবস্থা না থাকার জন্য বাইরে খেতে যেতে হত। সেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শুভজিৎ বলেন, ‘ভারতীয় ও বাংলাদেশীদের একরকম দেখতে। সেই কারণে সব সময় ভয়ে ভয়ে ছিলাম। কখন আমাদেরও না গুলি করে মেরে দেয়। কলেজে সেভাবে আক্রমণ না হলেও মাঝেমধ্যেই ঢিল ছোড়া হত। রাস্তায় ক্রিকেট ব্যাট, হকি স্টিক, লাঠি নিয়ে আন্দোলনকারীরা ঘুরে বেড়াত।’
এদিকে, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগের সমস্যা হচ্ছিল। তাঁর অভিযোগ, বাড়ি ফেরার জন্য একাধিকবার ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলেও সেরকম সাহায্য মেলেনি। শেষে কলেজের অধ্যক্ষের কাছ থেকে চিঠি লিখে নিজেদের প্রাণ হাতে করে শুক্রবার সকালে ১০ টি গাড়ি ভাড়া করে বাংলাদেশ থেকে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। যদিও গেদে সীমান্তেও তাঁদের রাতে থাকতে দেবে না বলেছিল বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুলিশ। পরে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সহযোগিতায় রাতে সীমান্তে থাকার পর রবিবার সকালে ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরেছি। শুভজিৎ জানায়, যতদিন না পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্ত হচ্ছে ততদিন আর সে বাংলাদেশ ফিরবে না। তাতে তার একটা বছর নষ্ট হলেও কিছু করার নেই। অন্যদিকে, ছেলে বাড়ি ফেরায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে শুভজিৎ এর মা বাবা ও বোন।