বাবুল হক, মালদহ: বরফে মোড়া রহস্য! ফ্রিজ খুলতেই মিলল যুবকের নগ্ন নিথর দেহ। এমন দৃশ্য চাক্ষুষ করে আঁতকে উঠলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাটি পুরাতন মালদহের একটি বেসরকারি আইসক্রিম কারখানার। নিহত যুবক সেই কারখানার গাড়িচালক ছিলেন। তিনি উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর বাসিন্দা। খুন না অন্য কিছু? বরফে ঢাকা সেই রহস্য উন্মোচনে তড়িঘড়ি তদন্তে নেমেছে পুলিশ। ঘটনার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়।
সোমবার সকালে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল পুরাতন মালদহের (Old Maldah) পুরসভার বাচামারি কলোনি লাগোয়া মোড় এলাকায়। এখানেই এক কারখানার ডিপ ফ্রিজ থেকে উদ্ধার হল নগ্ন যুবকের দেহ। নিহতের নাম মৃণালকান্তি বসু, বয়স প্রায় ৪০ বছর। ফ্রিজের বাইরে একটি মদের বোতল পাওয়া গিয়েছে। রোজকার মতো কারখানা ভিতর থেকে তালা বন্ধ করে ঘুমিয়ে ছিলেন ওই যুবক। কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় ছিলেন কেন, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। জানা গিয়েছে, নিহত যুবকের বাড়ি উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁ (Bongaon) থানা এলাকায়। দীর্ঘ প্রায় সাত বছর ধরে ওল্ড মালদহের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাচামারি কলোনি মোড়ের ওই আইসক্রিম কারখানায় গাড়ি চালক হিসাবে কাজ করতেন মৃণালকান্তি বসু। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে মালদহ থানার পুলিশ।
নিছক দুর্ঘটনা নাকি খুন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। যদিও আইসক্রিম কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ওই ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে মদ্যপান করতেন। গরম থেকে বাঁচতে মদ্যপ অবস্থায় আইসক্রিমের ডিপ ফ্রিজে ঢুকে আর বের হতে পারেননি। কারখানা কর্তৃপক্ষের এমন দাবি অবশ্য তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা সহজে মেনে নিতে চাইছেন না। মৃত (Dead) যুবক ফ্রিজের ভিতরে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় কেন, প্রশ্ন তদন্তকারীদের। কারখানার ভিতরে তিনি কি একাই ছিলেন, নাকি আরও কেউ ছিল? ভিতর থেকে তালাবন্ধ থাকলেও পিছনের দরজা দিয়ে কারখানায় ঢোকা ও বের হওয়া যায় কি না, পুলিশ তা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছে। মৃত যুবক প্রচুর মদ্যপান (Drink) করতেন বলে দাবি করা হলেও তাঁকে গাড়ি চালকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছিল কেন, এমন প্রশ্নের মুখেও পড়েছে আইসক্রিম কারখানা কর্তৃপক্ষ। ডিপ ফ্রিজ থেকে ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘিরে এদিন সকালেই চাঞ্চল্য ছড়ায় ওল্ড মালদহের মঙ্গলবাড়ির বাচামারি মোড় এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওল্ড মালদহ পুরসভার অন্তর্গত ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাচামারি মোড়ের কাছে আইসক্রিমের কারখানা ও গোডাউন রয়েছে। সেখানে গাড়ি চালক হিসাবে কাজ করতেন দক্ষিণবঙ্গের বনগাঁর যুবক মৃণালকান্তি বসু। দীর্ঘ প্রায় সাত বছর ধরে তিনি কাজ করতেন। কারখানায় তিনি রাত থাকতেন। কর্তৃপক্ষের দাবি, রোজকার মতো তিনি রবিবার রাতেও ভিতর থেকে গোডাউনের দরজা বন্ধ করে দেন। কিন্তু সোমবার সকাল হয়ে গেলেও গাড়ির চালক দরজা না খোলায় সকলের সন্দেহ হয়। বাইরে থেকে ডাকাডাকি করলে কোনও রকম সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। এমন অবস্থায় কারখানার ম্যানেজার পিছনের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ওই চালককে খোঁজাখুঁজি করে পাননি। অবশেষে গোডাউনের সব ফ্রিজ খুলে দেখতে গিয়ে আঁতকে ওঠেন ম্যানেজার ও অন্যরা। দেখা যায়, একটি বড় ডিপফ্রিজে (Deep Fridge) ওই গাড়ি চালকের মৃতদেহ নগ্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। খবর জানাজানি হতেই ঘটনাস্থলে প্রচুর লোকজন ভিড় জমান। ডিপফ্রিজ থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদহ (Maldah) মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওই কারখানার মালিক জয়ন্ত পাল চৌধুরী বলেন, “এই ব্যক্তি আমার আইসক্রিমের গাড়ি চালাতেন এবং রাত্রে এখানেই থাকতেন। তবে আজকে সকালে গোডাউনের দরজা না খোলায় সন্দেহ হয়। দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকলে প্রথমে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে আইসক্রিমের ডিপ ফ্রিজে তাঁর মৃতদেহ দেখতে পাওয়া যায়। মনে হচ্ছে, ঠান্ডা বাতাস পাওয়ার জন্যই ফ্রিজে ঢুকেছিলেন তিনি। মৃত ব্যক্তি প্রতিনিয়ত মদ্যপান করতেন। সম্ভবত ফ্রিজের ভিতরে থাকাকালীন বাইরে থেকে ডিপ ফ্রিজের ঢাকনা পড়ে গিয়ে অটো লক হয়ে যায়। তাতেই দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন।” একই দাবি করেছেন গোডাউনের ম্যানেজার সন্তোষ ঘোষ। তিনি বলেন, “সকালে এসে দেখি, গোডাউনের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ রয়েছে। অনেক ডাকাডাকি করলেও কোনও রকম সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। পিছনের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। অবশেষে তাঁকে একটি ডিপ ফ্রিজে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।” ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় পুলিশ।