• আন্দোলন ছাত্রদের ছিল না, ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে ফিরে বললেন পবিত্র সরকার ...
    আজকাল | ২৩ জুলাই ২০২৪
  • রিয়া পাত্র 

    উত্তপ্ত বাংলাদেশ, গত কয়েকদিনের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে কারফিউ, ছুটি। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা, ট্রেন। সে দেশের সংবাদমাধ্যমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ১৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে সংঘর্ষে, তারমধ্যে বেশিরভাগই পড়ুয়া। আর এই উত্তপ্ত বাংলাদেশে ১৮ থেকে ২১ তারিখ একপ্রকার ঘরবন্দি হয়ে রইলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। বন্ধ জানালা-দরজার ওপারে শুনলেন মুহুর্মুহু সাইরেন-হেলিকপ্টারের শব্দ, সাধারণের চিৎকার। শুনলেন মৃত্যুর খবর। দুই দেশের সরকারের তৎপরতায় সোমবার ফিরেছেন কলকাতায়। জন্মভূমি, অতি-প্রিয় বাংলাদেশকে জ্বলতে দেখে এলেন। দেশে ফিরে পবিত্র সরকার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে। শুনলেন রিয়া পাত্র।

    বাংলাদেশে বিশিষ্ট নাট্যকার সেলিম আল্ দীনের ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশে গিয়েছিলেন পবিত্র সরকার। কথা ছিল ২৩ জুলাই পর্যন্ত সেখানেই থাকার। তবে তা হয়নি। বাতিল অনুষ্ঠান, কার্যত মাঝের কয়েকটা দিন বন্ধ রইলেন ফ্ল্যাটে। কলকাতা থেকে যখন গেলেন, তখনও সে দেশের পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হয়নি। কিন্তু গিয়ে দেখলেন একেবারে অন্য বাংলাদেশকে। থমথমে-অবরুদ্ধ। চারদিকে স্লোগান। সকলে বলছেন ‘ছাত্র-আন্দোলন’। কিন্তু তিনি দেখলেন এবং বুঝলেন, ‘আন্দোলন আসলে সেখানে দিনে দিনে তীব্র আকার ধারণ করে। ১৮ তারিখে গিয়ে দেখি বড়-বড় বাঁশের লাঠি হাতে, হেলমেট পরে লোকজন রাস্তায়। শুধু ছাত্ররা নয়, রাজপথে-আন্দোলনে তাঁদের মাসতুতো-পিসতুতো দাদা-কাকুরা। তাঁরাই দখল নিয়েছেন আন্দোলনের। আন্দোলন আর ছাত্রদের নেই। একপ্রকার ছিনতাই হয়ে গিয়েছে আন্দোলন।‘ 

    তাহলে এই আন্দোলনে ভিড় বাড়ালেন কারা? ‘শাসক দলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে লিপ্ত হয়েছিলেন ছাত্ররা। তবে আওয়ামী-লিগের বিরোধী দলগুলি, বিএনপি, জামায়েতে ইসলাম এই সুযোগ ছাড়ল না, সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারাও বেরিয়ে পড়ল রাস্তায়। সরকারি ঘরবাড়ি, রাস্তা ঘাট অবরুদ্ধ, লুঠপাট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।‘

    এই পরিস্থিতিতে তিনি রইলেন কোথায়? ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায়, গত কয়েকদিন কোনওভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি তাঁর সঙ্গে। জানালেন, ‘আমি মোটামুটি পাঁচ দিন ঘরে বন্ধ ছিলাম। মহম্মদপুরের এক ফ্ল্যাটবাড়িতে। হাসিব রহমানের বাড়ি, সে আমার ছেলের মতো। আমি রাস্তায় বেরিয়ে লুঠপাট দেখিনি, ঘরের মধ্যে ছিলাম। হেলিকপ্টারের শব্দ শুনতাম, পুলিশের গাড়ি, সাইরেনের শব্দ অহরহ রাস্তায়, লোকজন চিৎকার করছে। পাশের বাড়ি থেকে কেউ কেউ শুনছেন গুলি চলার শব্দ। এভাবেই কাটল ক’টা দিন। আজও ফিরলাম যখন, দুটো গাড়ি দেখলাম পোড়া অবস্থায়, উল্টে আছে।‘

    তবে তিনি দেশে ফিরে আসার আগেই, সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট আমূল কোটা সংস্কারের রায় দিয়েছে। ৯৭ শতাংশ নিয়োগ করতে হবে মেধার ভিত্তিতে। নতুন কোটা সংস্কার নিয়ে কী ভাবছেন তিনি? জানালেন, ‘আশা করছি, এবার ছাত্ররা এই প্রস্তাব গ্রহণ করবে এবং শান্তির দিকে এগিয়ে যাবে। আমার এই অশান্ত বাংলাদেশ দেখতে ভাল লাগে না। বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গেলে, বলতেই হয়, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই, তাঁর দলের একচ্ছত্র আধিপত্য। আর সেটাই সমস্যা। দীর্ঘ শাসন কেউই মানতে চায় না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিও প্রকট। তাই সামান্য সুযোগ পেলেই হাসিনাকে বিপন্ন-বিব্রত করতে শুরু করে। আমি যতটা শুনেছি, ১৬-১৭ তারিখের আগেই আন্দোলন বড়দের হাতে চলে যায়। শুধু তাই নয়, নানা গুজব রটছে সেখানে।‘ 

    মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের ৩০ শতাংশ কোটার যৌক্তিকতা যদিও তাঁর মনেও নেই। জানালেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলেদের কোটা থাকে এতটা ঠিক আছে, কিন্তু তারপরের, তারপরের প্রজন্ম কেন? মুক্তিযুদ্ধ অনেক দিন হয়ে গেছে, হয়তো দেখা যাবে তাঁদের কারও পরিবার মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টা ভাবেই না। সুপ্রিম কোর্ট ঠিক করেছে।‘ কিন্তু নারী কিংবা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী? তাঁদের জন্য কি সংরক্ষণ প্রয়োজন ছিল? তাঁর মতে, সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে, দেশ এগিয়েছে, পরিস্থিতির বদল হয়েছে। তাই আর এই সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। 

    বাংলাদেশের কোটা প্রসঙ্গেই উঠে আসছে ভারতের কোটা প্রসঙ্গ। সুর জোরালো না হলেও, প্রশ্ন উঠছে। ভারতেরও কি তাহলে কোটা-সংস্কারের পথে হাঁটা উচিত? পবিত্র সরকারের মতে, কোথাও, কোটা কখনওই চিরস্থায়ী হওয়া উচিত নয়। অন্তত প্রতি ১০ বছরে কোটা সংস্কার হওয়া উচিত। পুনর্বিবেচনা করা দরকার, নইলে বোঝা যাবে কী করে, দেশ এগোচ্ছে কি না।
  • Link to this news (আজকাল)