নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: কয়েকমাস ধরে তীব্র দাবদাহ চলার পর বর্ষাতেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি নেই। এর ফলে এবার লঙ্কা চাষে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে বেলডাঙার বিখ্যাত লঙ্কার আদৌ এবার বাজারে দেখা মিলবে কি না, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন চাষিরা। প্রখর রোদে অধিকাংশ জমিতে লঙ্কা গাছ ঝলসে গিয়েছে। যেটুকু গাছ বেঁচে আছে, ব্যাপক বৃষ্টির ঘাটতির জেরে তাতে লঙ্কার ফলন হয়নি। গরমের শুরুতে চারাগাছ লাগিয়ে বর্ষায় যে লঙ্কার উৎপাদন হয়, এবার সেই উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গোটা বেলডাঙাতেই লঙ্কা চাষে একই অবস্থা। মাসখানেক পর থেকে লঙ্কার দাম ব্যাপক হারে বাড়বে বলেই মনে করছেন সব্জি বিক্রেতারা।
কৃষিদপ্তরের তরফে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ জেলায় বৃষ্টির ঘাটতি ৩৫ শতাংশের বেশি। শুধুমাত্র জুন মাসে ৭৮ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি রয়েছে। যার জেরে জলের অভাবে লঙ্কা গাছে ফুল পর্যন্ত আসেনি। অনেক গাছ রোদের তাপে মাঠেই পুড়ে খাক হয়েছে। বীজ কিনে সার দিয়ে গাছ বাঁচিয়ে রেখে শুধু খরচ বেড়েছে চাষিদের। বেলডাঙার লঙ্কাচাষি কচি মল্লিক বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও কয়েক বিঘা জমিতে লঙ্কা গাছ লাগিয়েছি। কোনও ফলন হয়নি। বৃষ্টির অভাবে গাছে ফুল পর্যন্ত আসেনি। সাধারণত চৈত্র মাসে আমরা লঙ্কা গাছ বসাই। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে সিজন শেষ হয়। কিন্তু এবার শ্রাবণ মাস পড়ে গেলেও গাছে কোনও লঙ্কা নেই। লঙ্কাচাষের এমন অবস্থা কোনও বছরই হয় না।
গরমের সময়টা লঙ্কা চাষের দারুণ উপযোগী হওয়ায় অন্যান্য সব্জির চাষ না করে অনেকেই লঙ্কা চাষ করেন। তবে পর্যাপ্ত বৃষ্টির দরকার হয়। তা না হলে জলসেচ দিয়ে গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হয়। এবার বৃষ্টি না হওয়ায় ব্যাপক মার খেয়েছে লঙ্কা চাষ।
অপর এক চাষি বলেন, বেলডাঙার লঙ্কার যেমন ঝাঁজ, তেমন নাম। বাজারে অন্যান্য লঙ্কা থাকলেও বেলডাঙার লঙ্কা আগে বিক্রি হয়। এবার আমরা একেবারেই লঙ্কা উৎপাদন করতে পারিনি। আবহাওয়া এতটা প্রতিকূল হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। উদ্যান পালন দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, বেলডাঙায় তিনটি মরশুমে লঙ্কা চাষ হয় প্রায় ৪৮৫ হেক্টর জমিতে। ভালো উৎপাদন হয় বলেই লাগাতার নিজেদের জমিতে লঙ্কা চাষ করেন চাষিরা। এবার গরমের সময় বৃষ্টি না হওয়ায় ফলন একটু খারাপ হয়েছে। তবে বর্ষার লঙ্কার চাষ ভালো হবে। এই সময় থেকেই বর্ষার জন্য লঙ্কার চারা লাগাতে পারেন চাষিরা। প্রতীকী চিত্র