নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা, ধূপগুড়ি: আলু ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের প্রথম দিনেই শঙ্কার মেঘ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে। সোমবার খাতায়কলমে হিমঘর খোলা থাকলেও সারাদিনে কোথাও আলু বের হয়নি। ফলে বাজারে আলুর জোগানে টান পড়তে চলেছে। এমন অবস্থা দু-একদিন চললেই বাজারে আলুর মারাত্মক সঙ্কট দেখা দিতে পারে। শুরু হতে পারে কালোবাজারি। রাতারাতি বেড়ে যেতে পারে আলুর দাম। এই আশঙ্কা থেকেই এদিন উত্তরের বিভিন্ন জেলায় বাজারগুলিতে আলু কিনতে ক্রেতাদের মধ্যে রীতিমতো হুড়োহুড়ি চোখে পড়েছে। শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি থেকে বালুরঘাট বেশিরভাগ বাজারে এদিন ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে সাদা আলু। তবে কোথাও কোথাও এদিনই এক থেকে দু’টাকা দাম বেড়েছে আলু বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৩৬-৩৭ টাকায়। মালদহে ৩৮ টাকাতেও আলু বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ। রায়গঞ্জে তুলনামূলক কম দামে কেজি প্রতি আলু বিক্রি হয়েছে ৩২ টাকায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অবশ্য মরিয়া রাজ্য সরকার। রাজ্যের কৃষি বিপণন দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেছেন, ‘সাধারণ মানুষ যাতে কম দামে আলু কিনতে পারেন, সেজন্য সুফল বাংলার স্টলের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি ময়দানে নামানো হচ্ছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে। তারা কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি বন্ড কিনে হিমঘর থেকে আলু বের করতে পারবেন।’
উত্তরবঙ্গে ৮৫টি হিমঘর রয়েছে। এদিন প্রতিটি হিমঘরই খোলা ছিল। কিন্তু কোনও হিমঘর থেকে আলু বের হতে দেখা যায়নি। হিমঘর চত্বর ছিল শুনশান। উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জগদীশ সরকার বলেন, ‘আমরা কোথাও কাউকে হিমঘর থেকে আলু বের করতে বাধা দিইনি। কিন্তু আমরা আলু বের করছি না। ভিনরাজ্যে আলু পাঠাতে দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে আলু বের করে আমরা কী করব? স্থানীয় বাজারে কত আলু বিক্রি হয়? ভিনরাজ্যে যদি আলু পাঠাতে দেওয়া না হয়, তা হলে উত্তরবঙ্গের হিমঘরগুলিতে এই মুহূর্তে যে পরিমাণ আলু রয়েছে, তা দিয়ে তিন বছর চলে যাবে।’ জগদীশবাবুর দাবি, উত্তরবঙ্গে যে পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়, তার ৭৫ ভাগ চলে যায় বাইরে। বাকি ২৫ ভাগের মধ্যে ৫-৭ শতাংশ বীজের জন্য রাখা হয়। বাকিটা এলাকার মানুষের খাওয়ার জন্য বিক্রি হয়। সুতরাং ঘাটতির কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তাহলে ভিনরাজ্যে আলু পাঠাতে প্রশাসন বাধা দিচ্ছে কেন? ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ‘আমরা তো সরকারকে বলেছিলাম, ২২ টাকা কেজি দরে আলু দেব। আমাদের কাছ থেকে কিনুক রাজ্য। তাছাড়া রাজ্যের কথামতো আমরা তো স্টল করে ২৮ টাকা দরে আলু বিক্রি করছিলাম। কিন্তু ক্রেতা কোথায়? উত্তরবঙ্গে সাদা আলুর চেয়ে ভুটানের আলুর চাহিদা বেশি। এটা মাথায় রাখতে হবে রাজ্যকে।’
ধূপগুড়ির একটি হিমঘরের মালিক রাহুল চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা হিমঘর খোলা রেখেছি। কর্মচারীরা প্রতিদিনের মতো কাজে এসেছেন। কিন্তু কোনও কৃষক বা ব্যবসায়ী আলু বের করেননি এদিন।’ ধূপগুড়ির অপর একটি হিমঘরের মালিক জয়দীপ সরকার বলেন, ‘কার্যত শুনশান ছিল হিমঘর চত্বর। কোনও হিমঘর থেকেই আলু বের হয়নি।’
এদিন শিলিগুড়ির বিধান মার্কেট, এনজেপি, গেটাবাজার, ফুলেশ্বরী সহ বিভিন্ন বাজারে ঢুঁ মেরে দেখা যায়, ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে সাদা আলু। একই দামে আলু বিক্রি হয়েছে জলপাইগুড়ির দিনবাজার, বয়েলখানা বাজার ও স্টেশন বাজারে। তবে কোচবিহারের ভবানীগঞ্জ বাজার কিংবা আলিপুরদুয়ার পুরসভা নিয়ন্ত্রিত নিউ টাউন বাজার, বড়বাজার, বউবাজারে কেজি প্রতি আলুর দাম এদিন ছিল ৩০-৩৫ টাকা।