নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পার্ক স্ট্রিট, এসপ্ল্যানেডের পর এবার ময়দান মেট্রো স্টেশন! জলে কার্যত ভেসে যাচ্ছে মাটির নীচে মেট্রো স্টেশনের ছাদ ও দেওয়াল। স্টেশনে ঢোকা রেকগুলি স্নান করে উঠছে যেন। গত কয়েকদিন ধরেই এখানে ছাদ ও দেওয়াল চুঁইয়ে জল পড়তে দেখা গেলেও সোমবার বর্ষার জেরে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে। ময়দান মেট্রো স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের পাশে এমার্জেন্সি এক্সিট গেট দিয়ে হু হু করে জল ঢোকে। একটা সময় যাত্রীদের আসা-যাওয়ার পথও জলময় হয়ে যায়। মেট্রো ভবনের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘ইলিয়ট পার্কের নীচে এই স্টেশনটির অবস্থান। ওই পার্কে দু’টি জলাশয় রয়েছে। বৃষ্টির জেরে সেখান থেকেই জল ঢুকছে মেট্রো স্টেশনে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পার্ক স্ট্রিট ও এসপ্ল্যানেডের মতোই পাতালপথে মাটি ও স্টেশনের কাঠামোর মাঝে ডি-ওয়ালে বড়সড় ত্রুটি রয়েছে। প্রায় ৪০ বছর আগে তৈরি এই অংশটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও হয় না। তার জেরে বারবার এই বিপত্তি।’
উল্লেখ্য, ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রেমালের জেরে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছিল। সেই সময় পার্ক স্ট্রিট ও এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনে প্রচুর জল ঢুকেছিল। প্ল্যাটফর্মগুলিতে হাঁটুসমান জল, রেলের ট্র্যাক সম্পূর্ণ জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ফলে ওই দিন টানা পাঁচ ঘণ্টা শহরের অন্যতম ‘লাইফলাইন’ থমকে থাকে। রাজ্যে লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে ওইদিন রাজভবনেই রাত্রিবাস করছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দেশের প্রথম মেট্রো রুটের এহেন দুর্দশার কথা জানতে পেরে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে কড়া বার্তা পাঠান তিনি। রেলমন্ত্রী তখন রেল বোর্ডের মাধ্যমে কলকাতা মেট্রোকে ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে পাঠান। বিষয়টি নিয়ে মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) পি উদয়কুমার রেড্ডি পরদিনই বিভাগীয় কর্তাদের চরম হুঁশিয়ারি দেন। জিএমের তরফে বিভাগীয় কর্তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর অসন্তোষের কথা উল্লেখ করা হয়। সেখানে তিনি বেশ কিছু রাজনৈতিক মন্তব্যও করেন, যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়েছিল। এতকিছুর পরও মেট্রোয় জল ঢোকা আটকাতে স্থায়ী কোনও সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসেনি। ওই সময় জল ঢোকার গোটা দায় কলকাতা পুরসভার ঘাড়ে ঠেলে দিয়েছিল রেল। পরবর্তী সময়ে পুরসভা নথি দিয়ে প্রমাণ করে, মেট্রোর নিজস্ব নিকাশি ব্যবস্থায় ত্রুটিতেই বিপত্তি হয়েছিল। এই অবস্থায় ময়দান স্টেশনে জল ঢোকা নিয়ে মেট্রো কোনও নতুন বাহানা হাজির করে, নাকি পাকাপাকি সমাধানের উপায় খোঁজে—সেটাই এখন দেখার।