সংবাদদাতা, তারকেশ্বর: শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার তারকেশ্বরে লক্ষাধিক ভক্ত সমাগম হয়েছে। শ্রাবণী মেলাকে ‘নির্মল মেলা’ করতে তৎপর প্রশাসন। রবিবার থেকেই শুরু হয়েছে ভক্ত সমাগম। সোমবার তারকেশ্বর মন্দিরে জল ঢালার জন্য লাইন এক কিলোমিটার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। শ্রাবণী মেলা শুরু হয়েছে ১৭ জুলাই (পয়লা শ্রাবণ)। তিথি অনুযায়ী তারকেশ্বরের শ্রাবণী মেলা শুরু হয় গুরু পূর্ণিমা থেকে রাখি পূর্ণিমা পর্যন্ত। রবিবারই ছিল গুরু পূর্ণিমা।
মেলা শুরুর আগে থেকেই প্রশাসন সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহারে জোর দিয়েছিল। সেইমতো নিষিদ্ধ প্লাস্টিক বন্ধে তৎপর ছিল প্রশাসন। মন্দির যাওয়ার রাস্তার দু’দিকে প্লাস্টিক টাঙানো সরু গলির চিত্র এবার অনেকটাই পাল্টেছে। সরকারি জায়গা দখল করে থাকা দোকান সরিয়ে দেওয়ায় সুষ্ঠুভাবে যাতায়াত করতে পারছেন পুণ্যার্থীরা।
বৈদ্যবাটি থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত রাস্তা রবিবার ও সোমবার তীর্থযাত্রীদের যাতায়াতের জন্য নো এন্ট্রি করে দেওয়া হয়। চারচাকার যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে এই দু’দিন। বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পুণ্যার্থীদের জল, খাবার ও চিকিৎসা পরিষেবা বিনামূল্যে দেয়। মেলাকে কেন্দ্র করে বৈদ্যবাটি নিমাই তীর্থ ঘাট থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত ছোট-বড় বহু অস্থায়ী দোকান তৈরি হয়েছে।
মেলার সময় পুণ্যার্থীরা মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে পারেন না। চোঙার মাধ্যমে গঙ্গা জল ঢালতে হয় মহাদেবের মাথায়। পুণ্যার্থীরা জানান, প্রতি বছরই এই সময় তারকেশ্বর মন্দিরের পুজো দিতে আসি। ভেবেছিলাম প্রচণ্ড ভিড়ে পুজো দিতে কষ্ট হবে। প্রশাসনিকভাবে খুব সুন্দর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে কয়েকটি জায়গায় প্রশাসনিক অব্যবস্থাও চোখে পড়েছে। ২ নং গেটের কাছে মিষ্টির দোকানের বাইরে কড়াইয়ে গরম তরকারি ফুটছে। মন্দিরের গেট খোলার পর হাজার হাজার ভক্ত সেদিকে ছুটে যাচ্ছে। যে কোনও সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। অন্যদিকে কালীবাড়ি মাঠের কাছে রাস্তায় জল ঢালার লাইন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি পুলিস। গলির মধ্যে হাজার হাজার পুণ্যার্থী সমস্যায় পড়েন। জলের জন্য হাহাকার শুরু হয়। আশপাশের বাড়ি থেকে তাঁদের জল দেওয়া হয়। এই এলাকার বাসিন্দারা পুণ্যার্থীদের চাপে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে পড়েন।
দুধপুকুরের উত্তরপাড় দিয়ে বেরনোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে কোনওরকম অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়নি ভক্তদের। মেলা উপলক্ষে অতিরিক্ত পুলিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে হুগলি গ্রামীণ পুলিসের পক্ষ থেকে। রয়েছে মহিলা ও সাদা পোশাকের পুলিস। দুধপুকুরে স্পিডবোর্ড নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা তৈরি ছিলেন। স্বাস্থ্যদপ্তরের পক্ষ থেকেও একাধিক শিবির করা হয়েছে। তারকেশ্বর মন্দির পুরোহিতমণ্ডলীর সভাপতি সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, প্রত্যেক বছরের মতো এবারও শ্রাবণী মেলায় লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর আগমন হবে। প্রথম সোমবার থেকেই পুণ্যার্থীদের ঢল নেমেছে। তারকেশ্বর পুরসভার স্যানিটারি ইনসপেক্টর মোহনকিশোর চট্টোপাধ্যায় বলেন, নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহার করলে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হচ্ছে। এদিনই ২৬ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। খালে আবর্জনা না ফেলার জন্য সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। তারকেশ্বরের শ্রাবণী মালাকে এবার নির্মল মেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তারকেশ্বরে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহার ন করার জন্য সকলের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। নিজস্ব চিত্র