• শ্যামসুন্দর মন্দিরে শ্রীরামকৃষ্ণের প্রথম পদার্পণ সার্ধশতবর্ষ পূর্তি উদযাপন, প্রস্তুতি তুঙ্গে খড়দহে
    বর্তমান | ২৩ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: দক্ষিণেশ্বরে সকাল থেকেই তৈরি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ। ঠাকুর বোধহয় বুঝেছিলেন, খড়দহ থেকে কিছুক্ষণের মধ্যে নৌকা আসবে। সেদিন নৌকায় শ্যামসুন্দর মন্দিরে পৌঁছে পরমানন্দে বিভোর হন তিনি। শ্যামের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘মা, তুমি এখানে বাঁশি বাজাচ্ছ’। সেদিন শ্যামের ভক্তরাও  ঠাকুরের ভাবে বিগলিত হয়েছিলেন। সেটাই ছিল ঠাকুরের শ্যামসুন্দর মন্দিরে প্রথম পদার্পণ। সেই ঐতিহাসিক ঘটনার ১৫০ বছর উদযাপনে উদ্যোগী হয়েছেন স্থানীয়রা। শুধু রামকৃষ্ণ নন, শ্যামের মন্দিরে এসে ভাববিহ্বল হয়েছিলেন মা সারদা থেকে শুরু করে ভগিনী নিবেদিতাও।


    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঠাকুর বলেছিলেন, ‘দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী, কালীঘাটের কালী এবং খড়দহের শ্যামসুন্দর, এঁরা জীবন্ত, হেঁটে চলে বেড়ান, কথা কন, ভক্তদের কাছে খেতে চান।’ স্বামী প্রভানন্দের ‘জার্নি উইথ রামকৃষ্ণ’ বইতে ঠাকুরের খড়দহ ভ্রমণের বর্ণনা পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে বর্ণিত হয়েছে। জানা গিয়েছে, খড়দহে প্রভু নিত্যানন্দের বংশধর তথা শ্যামসুন্দর মন্দিরের সেবাইত যাদবকিশোর গোস্বামীর সঙ্গে ঠাকুরের সুসম্পর্ক ছিল। তিনি মাঝেমধ্যে দক্ষিণেশ্বরে যেতেন। ১৮৭৪ সালের ২৯ জুলাই শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা। সকালে যাদববাবু ভাই হরিকিশোরকে নিয়ে নৌকায় দক্ষিণেশ্বর গিয়েছিলেন। পৌঁছে দেখেন খড়দহ আসার জন্য ঠাকুর তৈরি হয়ে গঙ্গার ঘাটের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। অথচ, আগে ঠাকুরের যাওয়ার কোনও পরিকল্পনার কথা কেউ জানতেন না। ঠাকুরের ইচ্ছেমতো তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে নৌকায় রওনা দিলেন। রাসখোলা ঘাটে নেমে যাদববাবু ঠাকুরকে গাড়িতে শ্যামের মন্দিরে যাওয়ার কথা বললেন। কিন্তু তিনি হেঁটেই পৌঁছলেন মন্দির। সেখানে পৌঁছে পরমানন্দে বিভোর হন। শ্যামসুন্দরের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘মা তুমি এখানেও বাঁশি বাজাচ্ছ’। এরপর মন্দির চত্বরে বসে তিনি দীর্ঘ সময় ভক্তিসঙ্গীতে মেতে ওঠেন। দুপুরে তাঁকে গোস্বামী বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। দোতলার বসার ঘরের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে ঠাকুরকে বসানো হয়। সেখানে তাঁকে দেওয়া হয় শ্যামসুন্দরের ভোগ। তৃপ্তিভরে ভোগগ্রহণ করে তিনি বিশ্রাম নেন। বিকেলে নৌকায় তিনি দক্ষিণেশ্বরে ফেরেন। 


    ১৯০৪ সালে শ্যামসুন্দরের মন্দিরে এসেছিলেন সারদা মা। তিনিও ভোগ নিবেদনের পাশাপাশি নামগানে মেতেছিলেন। শ্যামসুন্দরের মন্দির দর্শনের স্মৃতি নিজের লেখায় বর্ণনা করে গিয়েছেন ভগিনী নিবেদিতা। বলেছেন, এই স্থানের ইতিহাস ও আশ্চর্যজনক অনুভূতি আগামী ৪০০ বছরেও বিস্মৃত হওয়া সম্ভব নয়। তিনি এই মন্দিরে এসে প্রভু নিত্যানন্দের নিজের হাতে লেখা শ্রীভাগবত দেখেছিলেন। 


    পানিহাটি ত্রাণনাথ উচ্চ বিদ্যালয় ১২৫ বর্ষ উদযাপন কমিটি ও খড়দহ সারদা রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের যৌথ উদ্যোগে আগামী ২৯ তারিখ বিকেলে শ্যামসুন্দরের মন্দিরে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ইতিহাসবিদ তথা ত্রাণনাথ উচ্চবিদ্যালয় ১২৫ বর্ষ উদযাপন কমিটির সভাপতি শেখর শেঠ বলেন, খড়দহ ও পানিহাটি বৈষ্ণব সংস্কৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ তীর্থস্থান। এই স্থান শ্রীচৈতন্য, নিত্যানন্দ এবং রামকৃষ্ণের স্মৃতিধন্য। শ্যামসুন্দরের মন্দিরে ঠাকুরের আগমনের ১৫০ বছর উদযাপনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের গর্বের ধর্মীয় ঐতিহ্য তুলে ধরতে চাই।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)