• উচ্ছেদের মাঝেই রাতারাতি শতাধিক দোকান নিউ টাউনে
    এই সময় | ২৩ জুলাই ২০২৪
  • প্রশান্ত ঘোষ

    ফুটপাথ, সরকারি জায়গা জবরদখল করে গোটা রাজ্যেই গড়ে উঠেছে হাজার হাজার দোকান, বসতি। বেআইনি সেসব দোকান উচ্ছেদের জন্য এক মাস সময়সীমা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জবরদখলকারীদের দোকান, পসার নিজেদের সরিয়ে নিতে বলছেন প্রশাসনের কর্তারা।অথচ অভিযোগ, অবৈধ দোকান ভাঙা তো দূরের কথা, এই ‘এক মাস’-এর মধ্যে নতুন নতুন দোকান বসতে শুরু করেছে নিউ টাউনে। বিশেষ করে অ্যাকশন এরিয়া ২ ও ৩ এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দোকান বসে যাচ্ছে রাতারাতি। সিটি সেন্টার ২-সহ বিভিন্ন নির্মীয়মাণ মেট্রো স্টেশন ও সাবওয়ের যাওয়া-আসার পথে দোকান নিয়ে বসে গেছে লোকজন।

    অভিযোগ, কেউ কেউ বাঁশের চালের ওপর ত্রিপল খাটিয়ে, বেড়া দিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দোকান ঘর তৈরি করছেন সবার সামনেই। আবার কেউ কেউ রাতের অন্ধকারে কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি ‘রেডিমেড’ দোকান এনে বসাচ্ছেন রাস্তার দু’পাশে। এনকেডিএর অভিযানের মাঝেই কী ভাবে এমন অবৈধ দোকান বসছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিউ টাউনের বাসিন্দারা।

    এনকেডিএর সমীক্ষা অনুযায়ী অ্যাকশন এরিয়া ১, ২ ও ৩ মিলিয়ে দু’হাজারের মতো হকার বা ভেন্ডার আছে। এঁদের মধ্যে অনেকেই নিউ টাউনের ভূমিহারা বা জমিদাতা। তবে বেশিরভাগ মানুষ নিউ টাউনের বাইরের বাসিন্দা। রাজারহাট, ভাঙড় ছাড়াও বারাসাত, দেগঙ্গা, সোনারপুর, মিনাখা, ক্যানিংয়ের বহু মানুষ নিউ টাউনে ছোট দোকান চালাচ্ছেন।

    আবার ভিন্‌রাজ্যের অবাঙালি দোকানদারদের সংখ্যাও কম নয়। কেউ কেউ মাসিক ভাড়া বা স্থানীয়দের থেকে দোকান কিনে নিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করছেন। এনকেডিএর বক্তব্য, রাস্তা, ফুটপাথ, গ্রিন ভার্জ, আইল্যান্ড, পার্কিং লট দখল করে কোনও দোকান, পসরা বসানো যাবে না। ব্যবসা করতে হলে এনকেডিএর তৈরি করে দেওয়া মার্কেটে বসতে হবে।

    কেন্দ্রের অনুদান পাওয়া স্মার্ট সিটিতে সৌন্দর্যায়নে প্রাধান্য দিতে নগরোন্নয়ন দপ্তরের এই গাইডলাইন মানতে বাধ্য এনকেডিএ। সেখানকার এক কর্তা জানাচ্ছেন, নিউ টাউনে জবরদখলকারীদের পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই অ্যাকশন এরিয়া ১ ও ২-এ দশটি হকার্স মার্কেট চালু হয়েছে। অ্যাকশন এরিয়া ৩-এ সাপুরজি বাস স্ট্যান্ডের কাছে একটি মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করেছে এনকেডিএ। এছাড়াও নতুন তিনটি মার্কেট তৈরি হচ্ছে।

    হকার পুনর্বাসনের দায়িত্বে থাকা এনকেডিএর এক আধিকারিক বলেন, কারা নতুন মার্কেটে দোকান পাবেন, কাদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে, তার সমীক্ষা চলছে। হকারদের থেকে আইডি কার্ড, আধার কার্ড নেওয়া হয়েছে। যাঁরা প্রকৃত হকার, তাঁরাই দোকান পাবেন, এক্ষেত্রে কারও সুপারিশ খাটবে না।

    নিউ টাউনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী যে এক মাস সময় দিয়েছেন, সেই সুযোগে রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের সামনেই রাতারাতি নতুন দোকান বসছে আর্টস একর, ইনফোসিস, রোজডেল, ইউনিটেক, ইকো আর্বান ভিলেজ, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, যাত্রাগাছি, ইকোপার্ক, রাম মন্দির, আঠারো তলা-সহ বিভিন্ন জনবহুল এলাকায়। কম করে একশো নতুন দোকান বসেছে গত কয়েক দিনে, এমন তথ্য উঠে এসেছে এনকেডিএর সমীক্ষায়।

    নিউ টাউনের একটি বাসিন্দা সংগঠনের কর্তা সমীর গুপ্তা বলেন, ‘স্মার্ট সিটিতে যেখান সেখানে অবৈধ ঝুপড়ি দোকান কাম্য নয়। এক একজন হকার নানা নামে একাধিক দোকান করে বসে আছেন। এনকেডিএর কাছে অনুরোধ, প্রকৃত হকারদের খুঁজে বের করুন।’ রাজারহাট নিউ টাউনের তৃণমূল সভাপতি প্রবীর কর বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর গাইডলাইন মেনে প্রশাসনের কর্তারা সার্ভে করছেন। একটা মানুষ একটাই দোকান নিয়ে ব্যবসা করুক। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা করছি।’
  • Link to this news (এই সময়)