এই সময়, ভূপতিনগর: মাইকে করে সারা গ্রামে তৃণমূল কর্মীকে বয়কটের ঘোষণা করে বিজেপি পরিচালিত গ্রাম কমিটি। বিদ্যুৎ ও পানীয় জল বন্ধের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমনকী, ননী দোলাই নামে ওই তৃণমূল কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে ৫ হাজার টাকা জরিমানার নিদান দেওয়া হয়।ভূপতিনগর থানার মুগবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ বায়েন্দা গ্রামের এই ফতোয়ার ঘটনায় অভিযোগ পেয়ে বিজেপির স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী-সহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ননী দোলাইয়ের অভিযোগ, তৃণমূল করার ‘অপরাধে’ তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি কর্মীদের অত্যাচারের শিকার।
তিনি বলেন, ‘টোটোতে মাইক বেঁধে বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্যার স্বামী গ্রাম ঘুরে ঘুরে আমার সঙ্গে কোনও ধরনের যোগাযোগ না রাখার ঘোষণা করেন। আমি পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি।’ তাঁর স্ত্রী ঊষা দোলাই বলেন, ‘রবিবার বিজেপির লোকেরা আমাদের বাড়িতে এসে রেশন-জল-চাষ বন্ধের কথা বলে গিয়েছে। বলেছে বিদ্যুতের লাইন কেটে দেবে। আমরা গোরুর দুধ বিক্রি করে সংসার চালাই। সেটাও বন্ধ। এখন আমরা কী করব, বুঝতে পারছি না।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস তিনেক আগে এক বিজেপি কর্মীর বাড়ির গাছ থেকে ডাব চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে ননী দোলাইয়ের ১২ বছরের নাতি ও তার এক বন্ধু। দু’জনকে বেঁধে মারধর করে বিজেপির লোকজন। মারধরের ঘটনায় ননী দোলাই অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ দু’জনকে আটক করে। তবে পরে প্রমাণের অভাবে ছাড়া পেয়ে যায় তারা।
ভগবানপুর ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি অম্বিকেশ মান্না বলেন, ‘এর পর থেকে বিজেপি কর্মীরা ননীবাবুকে হেনস্থা করতে থাকে। মারধরও করা হয় তাঁকে। রবিবার স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা কৃষ্ণা সাঁতরার স্বামী শঙ্কর সাঁতরার নেতৃত্বে গ্রাম কমিটির সদস্যরা ননীবাবুর পরিবারকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন ও মাইকে করে বয়কটের ঘোষণা করা হয়। একটি তফসিলি পরিবারের চাষ-বিদ্যুৎ-জল-দোকান-বাজার বন্ধ করে যে ভাবে একঘরে করার ঘোষণা করেছে বিজেপি, তা বর্বরতা। আমরা তীব্র নিন্দা করছি।’
কৃষ্ণা সাঁতরা বলেন, ‘ননী দোলাই গ্রামের লোকজনের সঙ্গে সহযোগিতা করছিলেন না। সমস্যা মেটাতে দু’বার সালিশি ডাকা হলেও আসেননি। এর পরে গ্রামের লোকজন মিটিং করে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন। এর সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগাযোগ নেই।’
কাঁথির এসডিপিও দিবাকর দাস বলেন, ‘মাইকে ঘোষণার খবর পেয়ে গ্রামে ভূপতিনগর থানার পুলিশ যায়। পরে রাতে ওই ব্যক্তি ও তাঁর পরিবার থানায় এসে লিখিত অভিযোগ জানান। চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’
এলাকার বিজেপি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ মাইতি বলেন, ‘গ্রাম কমিটিতে শুধু বিজেপি নয়, সব দলের লোকজন রয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রামের সকলে নিয়েছে বলে শুনেছি। আমাদের দলের ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’