বধূ খুনে চাঞ্চল্যকর ফুটেজ প্রকাশ্যে, রুমালে মুখ ঢাকা ব্যক্তি কে?
বর্তমান | ২৪ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: আরামবাগে গৃহবধূ খুনে চাঞ্চল্যকর মোড়। শহরের এনায়েত পল্লির ফ্ল্যাট বাড়িতে গত রবিবার সাতাশ বছরের সাবিনা বেগম খুন হয়েছিলেন। দোতলার ঘরের মেঝেতে নলিকাটা রক্তাক্ত দেহ পড়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ঘটনার দিন মুখে রুমাল ঢাকা এক ব্যাক্তিকে ফ্ল্যাটে ঢুকতে দেখেছিলেন। পুলিস সন্দেহভাজন ওই ব্যাক্তির সন্ধানে নামে। শহরের বাসুদেবপুর মোড়ের সিসিটিভি ক্যামেরায় মুখে রুমাল ঢাকা এক বাইক আরোহীকে এলাকায় ঢুকতে দেখার ছবি মিলেছে। ঘটনাস্থল থেকে বাসুদেবপুর মোড়ের দূরত্ব খুব বেশি নয়। ফলে, বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে সিসিটিভির ফুটেজ মিলে যাচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিস এটাও মনে করছে, সাবিনার পরিচিত কেউ তাঁকে খুন করে থাকতে পারে। আরামবাগের এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, তদন্ত চলছে। সিসিটিভি ফুটেজ সহ বেশকিছু তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। আমরা আশাবাদী, খুব দ্রুত খুনিকে ধরা সম্ভব হবে।
শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের এনায়েত পল্লি অভিজাত এলাকা। বহু মানুষের বসবাস। স্বভাবতই দিনে দুপুরে শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন হাড়হিম করা খুনের ঘটনা ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই বধূর পরিচিত কোনও ব্যাক্তি ফ্ল্যাটে ঢুকেছিলেন। দুপুরে প্রধান গেটবন্ধই থাকে। অচেনা ব্যাক্তির পক্ষে ভিতরে ঢোকা সম্ভব নয়। ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের মধ্যে সেদিন কেউ ভিতর থেকে গেট খুলে দিয়েছিলেন। তদন্তকারীদের এই ধারণার সঙ্গে ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্যের অনেকটাই মিল। তাঁরা পুলিসকে জানিয়েছেন, ওইদিন দুপুর বারোটা নাগাদ মুখে রুমাল ঢাকা অবস্থায় সন্দেহভাজন এক ব্যাক্তি ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল। কিছু পরেই পড়শি মহিলারা শিশুকন্যার লাগাতার কান্না শুনে পান। বিকেল তিনটের সময় ফ্লাটে ঢুকে তাঁরা দেখতে পান সাবিনার নলিকাটা দেহ পড়ে রয়েছে। ঘরের চারিদিকে চাপচাপ তাজা রক্ত।
এনায়েত পল্লি সংলগ্ন বাসুদেবপুর মোড়ে বসানো রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। পুলিস তদন্তে নেমে সেই ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। সেখানে দেখা যায়, মুখে রুমাল ঢাকা অবস্থায় এক বাইক আরোহীকে এলাকায় ঢুকতে দেখা যায়। তদন্তকারী এক অফিসার বলেছেন, ফুটেজের ছবি খতিয়ে দেখে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। সন্দেহভাজন ব্যাক্তির বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। মুখ ঢাকা থাকলেও বাইকের নম্বর মিলেছে। নাম্বারটি জাল কি না সেটাও দেখা হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গেও আমারা কথা বলেছি। প্রতিবেশী আফরিন সুলতানার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। খুনিকে চিহ্নিত করার কাজে সেই তথ্য আমাদের কাজে লাগবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর -২ ব্লকের যোত কানুরামগড় এলাকায় তদন্তকারী দলের সদস্যরা গিয়েছিলেন। সেখান থেকেও কিছু তথ্য আমারা পেয়েছি। আমদের কাছে যে তথ্য হাতে এসেছে তাতে মোটামুটি নিশ্চিত খুনি ওই গৃহবধূর পরিচিত ব্যাক্তি। বাড়ির মালিক কামাল হোসেন বলেন, ফ্লাট বাড়ির কাছেই আমার বাড়ি। ফ্ল্যাটের উপর ও নিচুতলায় ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। একজন বাসিন্দা দু’মাস ধরে থাকছেন। সাবিনা বেগম ১৬ তারিখ থেকে থাকছিলেন। ফ্ল্যাটের বাইরের গেট ভিতর থেকে সবসময় বন্ধ থাকে।ভিতরের কেউ দরজা খুলে না দিলে বাইরের লোক প্রবেশ করা সম্ভব নয়। ঘটনার দিন ভিতর থেকে কেউ দরজা খুলে দিয়েছিল। মৃতার মামা গিয়াসউদ্দিন খান বলেন, ঘটনার দু’দিন পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও খুনির সন্ধান পাওয়া যায়নি। আশা করছি, পুলিস দ্রুত খুনিকে ধরতে পারবে।