• নদীগর্ভেই রাস্তা, মাফিয়া দৌরাত্ম্যে অচেনা অজয়
    বর্তমান | ২৪ জুলাই ২০২৪
  • সুমন তেওয়ারি, জামুড়িয়া: নদীগর্ভে চওড়া রাস্তা। দিব্যি চলাচল করতে পারে বড় গাড়ি। পাথর ফেলে তৈরি করা হয়েছে পার্কিং জোন। সেখানে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে বালি বোঝাই লরি, ডাম্পার।  মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে চেনাই যাচ্ছে না ভরা বর্ষায় উতলা অজয়কে!   


    কয়লা খনির ওভারবার্ডেন ফেলে উঁচু করে নদীর মাঝ বরাবর গড়ে তোলা হয়েছে পার্কিং জোন। সেখানেই দাঁড়িয়ে বালি তোলার জন্য ব্যবহৃত একের পর এক দৈত্যাকার মেশিন। তার অদূরেই নদীগর্ভ ফুঁড়ে পাথর ফেলে তৈরি হয়েছে চওড়া রাস্তা। মাঝ নদীতে কারবারিদের অস্থায়ী অফিস। জামুড়িয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অজয়ের এই ছবি। দেশেরমোহন থেকে তালডাঙা হয়ে চিচুড়বিল পর্যন্ত অজয়ের উপর চলছে এমন অরাজকতা। তার চেয়েও বড় কথা, জল প্রকল্পের গায়েই গড়ে তোলা হয়েছে বালি ঘাট। যে কোনওদিন অকেজো হয়ে যাবে জল প্রকল্প। তখন চরম জলসংকটে ভুগতে হতে পারে বিস্তীর্ণ শিল্পাঞ্চল। সবমিলিয়ে নদীর গতিপথকে নিয়ে ছেলে খেলা হচ্ছে। অথচ, প্রশাসন নির্বিকার। অবশেষে জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়তেই টনক নড়েছে পুলিসের। 


    জেলাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, ‘    সোমবারই আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আধিকারিকরা সরেজমিনে তদন্ত করে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। কোনও রকম অন্যায় কাজ বরদাস্ত করা হবে না।’ 


    জামুড়িয়া থানা এলাকা শিল্পাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধশালী। বালি থেকে কয়লা কারবারের অবাধ রমরমা। একপাশে ঝাড়খণ্ড। অন্যপাশে বীরভূমের কাঁকরতলা। সীমান্তবর্তী এই এলাকা থেকে বৈধ, অবৈধ কয়লার আদানাপ্রদান লেগেই থাকে। তা বলে একেবারে অজয় নদী কার্যত বুজিয়ে পার্কিং জোন! এমন ঘটনায় তাজ্জব প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। জানা গিয়েছে, কয়েকমাস আগেই এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছে মাফিয়ারা। ওয়েস্টবেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যাণ্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন এই এলাকায় কয়লা উত্তোলনের বরাত পেয়েছে। তারাই বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে কয়লা উত্তোলন করছে। জানা গিয়েছে, সেই এলাকার ওসিপি থেকে ওভারবার্ডেন পাথর এনে নদী গর্ভের একাংশ বুঝিয়ে ফেলা হয়েছে দেশেরমোহন গ্রামের সামনে। এভাবে আস্ত নদী চুরি হতে দেখে স্তম্ভিত এলাকাবাসী। কিন্তু এরা এতটাই প্রভাবশালী যে, প্রতিবাদ করার সাহস দেখাননি কেউই। 


    দেশেরমোহন গ্রামের পাশেই রয়েছে অজয়ের তালডাঙা ঘাট। আসানসোল থেকে জামুড়িয়ায় এই ঘাট পর্যন্ত বাস পরিষেবা রয়েছে। ঘাট হয়ে নদীর উপর অস্থায়ী রাস্তা ধরে যাওয়া যায় বীরভূম। সেখান থেকেও বহু মানুষ এই রাস্তায় যাতায়াত করেন। এই তালডাঙা ঘাটের পাশেই রয়েছে একটি বড় জলপ্রকল্প। সেখান থেকে বিস্তীর্ণ অংশে জল সরবরাহ করা হয়। সেইৃ প্রকল্পটি ঘিরে ধরেছে বালি কারবারিরা। জলপ্রকল্পের প্রাচীরের পাশ দিয়ে রাস্তা থেকে মাঝ নদী পর্যন্ত রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে তারা। সেখানে ঢোকে ১৬ চাকা থেকে ২২ চাকার লরি। নদীর গতিপথের সর্বনাশ করে সেখানেই গড়ে উঠেছে অস্থায়ী অফিস। 


    এখানেই শেষ নয়, লোদা গ্রামের কাছে কয়লা প্রকল্পের মাঝে গড়ে উঠেছে বালির কাঁটা। কয়লার সঙ্গে বালি কারবারের কী সম্পর্ক? কাঁটার দায়িত্বে থাকা মানুষ নীরব। তালডাঙা পাকা রাস্তা ধরে জামুড়িয়া দিয়ে যেতেই রাস্তার একপাশে বালির পাহাড়ের স্তূপ। অন্যপাশে কোল ডাস্ট ফ্যাক্টরি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়লা পাচার কাণ্ডে সিবিআই চার্জশিটে নাম থাকা এক মাফিয়ার কয়লা কাঁটা এটি। ঝাড়খণ্ড, বীরভূম ও স্থানীয় এলাকা থেকে চোরাই কয়লা এসে এখানে জমা হয়। সেখান থেকেই তা পাচার হয়, পোশাকি নাম কোল ডাস্ট ফ্যাক্টরি।
  • Link to this news (বর্তমান)